মাসুম বিল্লাহ, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)
দুর্গাপুরে কবি ও কবিতা প্রদর্শনী
গারো পাহাড় অধ্যুষিত, জলমাতা সোমেশ্বরী জল অববাহিকায় বাংলাদেশ সাহিত্য জাদুঘর, দুর্গাপুর, নেত্রকোনার প্রতিষ্ঠাতাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো শীতকালীন জনপদ সাহিত্য উৎসব-২০২২। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী উৎসব উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ। এ বছর উৎসব উৎসর্গ করা হয় করোনায় মৃত্যুবরণকারী কবি সাহিত্যিকদের প্রতি। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে সারাদেশের কবি সাহিত্যিকদের আগমনে উৎসব প্রাঙ্গণ ছিল বেশ আনন্দমুখর।
আয়োজনের শুরুতে বাংলাদেশ সাহিত্য জাদুঘরের পরিচালক কবি জনপদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় ও উৎসব আহ্বায়ক কবি আবুল বাশারের সভাপতিত্বে শুরু হয় আমন্ত্রিত কবি লেখকদের স্বরচিত সাহিত্য পাঠ। এতে স্বরচিত পাঠ ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জামালপুরের সিভিল সার্জন কবি মেহেদী ইকবাল, শূন্য দশকের অন্যতম কবি কাজী নাসির মামুন, কবি রাহমান হাবিব, কবি তানভীর জাহান চৌধুরী, কবি দেবব্রত, কবি রহমান জীবন প্রমুখ।
প্রতিবারের ন্যায় এ বছরের উৎসব আয়োজনে ছিল ভিন্ন এক মাত্রা সংয়োজন। এ বছর দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে নব ভাবনায় শুরু হয়- কবি ও কবিতা প্রদর্শনী। এতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ১৫ জন মান কবির কবিতা ও জীবন আখ্যান প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া কবিরা হলেন কবি শামসুল ফয়েজ, কবি মতেন্দ্র মানখিন, কবি মাহমুদ কামাল, কবি মোস্তফা মইন, কবি মেহেদী ইকবাল, কবি রবিন পারভেজ, কবি সরকার আজিজ, কবি অনিন্দ্য জসীম, কবি রোকসানা আফরীন, কবি কাজী নাসির মামুন, কবি মানস সান্যাল, কবি স্বপন সান্যাল, কবি মামুন খান, কবি দুনিয়া মামুন। সেই সাথে ভিন্ন স্টলে প্রদর্শিত হয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নানা দূর্লভ জিনিসপত্র।
বিকাল ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের মূল পর্বসমূহ। এ সময় নেত্রকোনার আদিবাসী জনসমাজ, কৃষ্টি ও লোকাচার বিষয়ক এক সেমিনার পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে গারো জাতিসত্তার বরেণ্য কবি মতেন্দ্র মানখিনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, গবেষক পল্টন হাজং। আলোচক হিসেবে যুক্ত হন কথাশিল্পী শাখাওয়াত বকুল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সম্মানিত বিভাগীয় প্রধান আল জাবির।
এর পর অনুষ্ঠিত হয় সম্মাননা প্রদান পর্ব। এ বছর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অসামান্য অবদান রাখা তিন গুণি ব্যক্তিত্বকে বাংলাদেশ সাহিত্য জাদুঘর সম্মাননা-২০২২ প্রদান করা হয়। কবিতায় সম্মাননা পান সত্তর দশকের অন্যতম কবি আশরাফ মীর, কথাসাহিত্যে সমকালীন কথাসাহিত্যিক তাশরিক-ই-হাবিব, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণায় সম্মাননা পান বরেণ্য লেখক ও গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়োব।
সম্মাননা পর্বের বাংলাদেশ সাহিত্য জাদুঘরের সভাপতি গল্পকার অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কবি লায়ন মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন কবি সাহিত্যিকদের সৃজনশীল কর্মসাধনার স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতা। বাংলাদেশ সাহিত্য জাদুঘর, সেই লক্ষ্যে যে শীতকালীন জনপদ সাহিত্য উৎসবের সূচনা করেছে, তা অত্যন্ত শুভ চেতনার পরিচায়ক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াহেদ আলী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ স্বপন সান্যাল, বিশিষ্ট রাজনৈতিক আলী আজগর, অ্যাডভোকেট মানেশ চন্দ্র সাহা, প্রেসক্লাব সভাপতি এস. এম রফিকুল ইসলাম রফিক, দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক দিলোয়ারা বেগম, কবি প্রাঙ্গণ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা কবি জালাল উদ্দিন আহমেদ, দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী হাসান তালুকদার।