রাজশাহী ব্যুরো

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২২

সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি অশুভ কিছু করলে রাজপথেই জবাব : রাসিক মেয়র

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে ভালো। তবে না আসলেও বিএনপির জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না।

রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সমাবেশের নামে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কোন কর্মকাণ্ড তথা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোন অশোভন মন্তব্য এবং রাজশাহীর জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন করলে তা বরদাশত করা হবে না। রাজশাহীর সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি যদি এইরূপ কোন অশুভ তৎপরতা ও অপরাজনীতি করতে চায়, তাহলে রাজপথে থেকে রাজনৈতিকভাবে এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

বিএনপি’র দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে বৃহষ্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় কুমারপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে লিটন বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে তারা ইতিমধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, যখনই বাংলাদেশে নির্বাচন এগিয়ে আসে ঠিক তখনই বিএনপি নামক সংগঠনটি সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, সৈয়দ শাহাদত হোসেন, রেজাউল ইসলাম বাবুল, ডাঃ তবিবুর রহমান শেখ, বদরুজ্জামান খায়ের, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আহ্সানুল হক পিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকার, মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জিয়া হাাসন আজাদ হিমেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ কবির সেন্টু, রবিউল আলম রবি, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মকিদুজ্জামান জুরাত, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ ফ ম আ জাহিদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক পংকজ দে, উপ-প্রচার সম্পাদক সিদ্দিক আলম, সদস্য নজরুল ইসলাম তোতা, শাহাব উদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আব্দুল মান্নান, সৈয়দ মন্তাজ আহমেদ, মজিবুর রহমান, আলিমুল হাসান সজল, মাসুদ আহমদ, আশীষ তরু দে সরকার অর্পণ, মহানগর শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ আলী মুনমুন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিএনপি ইতিপূর্বে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করেছিলো। সেই সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। এই হুমকির প্রতিবাদে আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর রাজনৈতিক ভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচী গ্রহন করি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একটি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করি, যা বর্তমানে চলমান। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বিএনপি এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ড গুলোতে কর্মী সভার নামে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অশোভন বক্তব্য প্রদান করে রাজশাহীর শান্তিপূর্ণ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়। তাদের বিভিন্ন উস্কানী মূলক বক্তব্য রাজশাহীর স্বাভাবিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে তারা হীন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা লক্ষ্য করলাম যে, গত ২৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখে ১৬ নং ওয়ার্ডের এক কর্মী সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু যে উস্কানী মূলক বক্তব্য প্রদান করে কাল্পনিক হত্যাকান্ডের তথ্য উপস্থাপন করেছেন তার মাধ্যমে মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদী গোষ্ঠিকে উস্কে দিয়ে তারা আবারো রাজশাহীতে জঙ্গীবাদ কায়েম করতে চায়, জনাব মিনু’র বক্তব্যে তা সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে।

আমরা বিএনপি’র সমাবেশগুলোতে তাদের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তাতে দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি ইঙ্গিত বহন করে। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার হয়েছে যে, তারা দেশে কোন গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক স্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকুক তারা তা চায় না। এর মধ্যে দিয়ে প্রমান হয়েছে যে, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় তারা অগণতান্ত্রিক পন্থায় ও প্রভু শক্তির সহায়তায় দেশের ক্ষমতা দখল করে আবারো দেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্রে কায়েম করতে চায়।

বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ সালের দুঃশাসনের জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। তারা দেশে রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস কায়েম করেছিলো। তৎকালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোকতায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল ইমাম, নাটোরের জননন্দিত জননেতা সাবেক এম.পি মমতাজ উদ্দিনসহ সারা দেশে প্রায় ২৪ হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিলো, লক্ষাধিক আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার হত্যা, সন্ত্রাসী ও দূর্নীতি করেই ক্ষান্ত হয় নি, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২২ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে, এর মূল হোতা ছিলো তারেক রহমান।

রাজশাহীতে বিএনপি’র সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি’র নেতাদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে দেশে কোন সরকার নেই। তারা বক্তব্য দিয়ে বলছে রাজশাহীতে সেমিফাইনাল খেলা এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ফাইনাল খেলা হবে। তাদের এহেন দূরভিসন্ধি মূলক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা রাজপথের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও নাশকতার রাজনীতি বেছে নিয়েছে। তারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এর ধারাবাহিকতায় আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য কললাম তারা রাজশাহীর বিভিন্ন ছাত্রবাস গুলোতে বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সমাবেশ ঘটাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করলাম বিএনপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ২২ নভেম্বর তানোর ডাক বাংলো মাঠে বোমা মজুদ করার সময় ককটেল বোমা বিস্ফোরন হয় এবং সেখান থেকে অনেকগুলো ককটেল বোমা উদ্ধার করা হয়। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার গণতন্ত্রের চর্চায় বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাস করে বলেই বিরোধী দলের সমাবেশে কোন প্রকার বাধা প্রদান না করে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এই সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা নানাবিধ কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করছে যে, তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব নেতারা যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা যখন সফল ভাবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখে অব্যাহত ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যখন গোটা বিশ্বের অর্থনীতি হুমকির মুখে তখনও আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তখনই ৭১এর পরাজিত শক্তিরা, ৭৫এর কুশীলবরা তথা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তারেক রহমান লন্ডনে বসে প্রভু শক্তিদের খুশী করার জন্য বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। আমরা কি ভুলে গেছি ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের কথা! তারা দেশকে পাঁচ বার দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করেছিলো। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে রাজশাহী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছিলো, তাদের আমলে বাংলা ভাই এর নেতৃত্বে জেএমবি সৃষ্টি করে রাজশাহীর বাগমারা, রানীনগর, আত্রাই সহ বৃহত্তর রাজশাহীতে জঙ্গীবাদের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন রাজশাহী তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নাদিম মোস্তফা, আলমগীর কবির গং, এরাই আবার আন্দোলনের নামে বোমা মেরে পুলিশ কর্মী সিদ্ধার্থকে হত্যা করেছিলো। আজকে এই সকল সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের মদদ দাতাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনে আমরা বিস্মিত হই, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সকল কর্মসূচীতে বিশ্বাসী। সকল রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী মিছিল, সমাবেশ করবে- এটাই রাজনৈতিক চর্চা। রাজশাহীতে বিএনপি সমাবেশ করবে এতে আমাদের কোন বাধা থাকবে না, তবে রাজনৈতিক কর্মসূচী ও সমাবেশের নামে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কোন কর্মকান্ড তথা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোন অশোভন মন্তব্য এবং রাজশাহীর জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন করলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর তা বরদাশত করবে না। রাজশাহীর সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি যদি এইরূপ কোন অশুভ তৎপরতা ও অপরাজনীতি করতে চায়, তাহলে রাজপথে থেকে রাজনৈতিকভাবে এর সমুচিত জবাব দিবে আওয়ামী লীগ।

এদিকে, রাজশাহীর সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির অশুভ তৎপরতা ও অপরাজনীতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে রাসিক মেয়র লিটনের নের্তৃত্বে নগরীতে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সমাবেশ,রাজপথে জবাব,রাসিক মেয়র
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close