সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ

  ৩০ নভেম্বর, ২০২২

পদ্মা সেতুর পিলারের কাছে বালু উত্তোলন

দেশের টাকায় নির্মিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ধারে কাছে শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অবাধে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ বালু বহন করে নিতে পদ্মার বুকে ঢল নেমেছে বালুবাহী বাল্কহেডের। প্রশাসন বলছে, পদ্মা নদীতে কোনো বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রশাসনের এ কথার নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ওই প্রভাবশালী বালুখেকো সিন্ডিকেট প্রতিদিন পদ্মার তলদেশের লাখ লাখ ঘনফুট বালু লুটে নিচ্ছে। এর ফলে বিপুল অঙ্কের টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ২৫ থেকে ২৮ নাম্বার পিলারের কাছে শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেস্ট পাইল ড্রাইভের যন্ত্রাংশ নদীর তলদেশ থেকে উঠানোর জন্য ১৬টি ড্রেজারকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হলেও অনুমতি ছাড়া প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে পদ্মার তলদেশ থেকে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

বালু বহন করে নিতে পদ্মায় বুকে দেখা গেছে বাল্কহেডের ঢল। দেশীয় তৈরি ড্রেজারগুলো থেকে বালু লোড করতে সেখানে ছুটে আসছে শত শত বাল্কহেড। এসব বাল্কহেডের মাধ্যমে বালু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বাল্কহেড ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন বা নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মা সেতুর পিলারের কাছে বালু উত্তোলনের চিত্র দিনের বেলা দেখা গেলেও রাতের বেলায় বালু উত্তোলনে ড্রেজারের সংখ্যা আরো বাড়ে। তবে কে বা কারা এ বালুখেকো প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তাদের নাম জানাতে পারেননি তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর পিলারের কাছে পদ্মার বুকে যেসব ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেসব ড্রেজারের মধ্যে কয়েকটির নাম জানা গেছে। ড্রেজার গুলো হচ্ছে : চাঁদের আলো ড্রেজিং প্রকল্প, বিক্রমপুর ড্রেজিং প্রকল্প, মদিনার আলো-১, বিসমিল্লাহ-২, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, আল্লাহ ভরসা, রিভারডিক্স ড্রেজিং প্রকল্প, পদ্মা লোড ড্রেজার-২, আল ফাতেহা ড্রেজিং প্রকল্প, এমভি আল-আরাফ, মেসার্স তোফাজ্জল মোল্লা, এমভি সিয়াম প্রভা, এমভি মোনজিয়াত, মেসার্স মরিফম সালমা-১, দক্ষিণ দশআনী, এমভি হাসনাত হাফিজুর-১, এমভি মিশু মোল্লা-প্রভৃতি নামের ড্রেজারে বালু উত্তোলনের দৃশ্য সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা গেছে। তবে এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নাম জানা যায়নি।

তবে মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী চৌধুরী জালাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শত শত ড্রেজার দিয়ে যারা বালু উত্তোলন করছে তারা সবাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও নৌপুলিশের যারা আমার ড্রেজারের কাছে আসেন তারা আমার বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে আমি আমার বৈধ কাগজপত্র তাদের দেখালে তারা তখন আমার ড্রেজার ধরেন না। এদিকে পদ্মা সেতুর পিলারের কাছে বালু উত্তোলনের ড্রেজার ও বাল্কহেড শ্রমিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলেও তারা বলেন, তাদের বালু উত্তোলনের অনুমতি রয়েছে। তারা জানেন অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ড্রেজার শ্রমিক বলেন, তারা ৬০ পয়সা ঘনফুট দরে বাল্কহেডগুলোর কাছে বালু বিক্রি করছেন। আয়তন অনুযায়ী একেকটি বাল্কহেডে ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনফুট বালু ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।

এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল বলেন, পদ্মায় কোনো বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়নি। গত ছয় মাসের তথ্য অনুযায়ী অবৈধ ড্রেজার বা অবৈধ বাল্কহেডে বালু উত্তোলনের সময়ে অভিযানে ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫০টি নৌযান চলাচলের অকেজো করা হয়েছে।

মাওয়া কোস্টগার্ডের কমান্ডার বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা অভিযানে গেলেই ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কাগজপত্র দেখান। এতে আমরা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।

এদিকে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের পদ্মা সেতুর পিলারের ধারে কাছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেস্ট পাইল ড্রাইভের যন্ত্রাংশ নদীর তলদেশ থেকে উঠানোর জন্য ১৬টি ড্রেজারকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেতুর নির্দিষ্ট পিলার তথা ২৭ থেকে ২৮নং পিলারের মাঝের অংশে ২৫০ মিটারের বাইরে ওই ড্রেজারগুলো বালু উত্তোলন করতে পারবে। তবে বিক্রি করতে পারবে না। তিনি বলেন ১৬টি ড্রেজারের বাইরে যা আছে- তা সব অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

অন্য দিকে পদ্মাজুড়ে অবাধে বাল্কহেড চলাচলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগেও ড্রেজার নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। বরাবরই সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে সেগুলো তাদেরই। তিনি আরো বলেন, অবাধে বাল্কহেড চলাচল আর করবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে তথ্য জানার জন্য মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে তার মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বালু উত্তোলন,পদ্মা সেতু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close