হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

  ২৯ নভেম্বর, ২০২২

কবি গুরুর সেই ছোট নদী দখলে বিলীনের পথে

ফাইল ছবি

‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈখাশ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।/পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি/তুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতাটি অনেকের সঙ্গেই পরিচিত। তিনি কবিতাটি লিখেছিলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাচারি বাড়িতে বসে। ওই বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সেই ছোট নদী। নদীটির অস্তিত্ব এখনো আছে, তবে দখল দূষণে মৃত প্রায়। স্থানীয়রা ওই নদীকে বলেন, খোনকারের জোলা।

শাহজাদপুর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট নদী খ্যাত খোনকারের জোলাটি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামারসহ কাঁচা পাকা অনেক স্থাপনা। কবি করতোয়া নদী হয়ে এই খোনকারের জোলা দিয়েই কাছারি বাড়িতে আসতেন। এই খোনকারের জোলা নিয়েই কবি লিখেছিলেন, আমাদের ছোট নদী কবিতাটি।

সরেজমিনে গিয়ে ও জোলার রামবাড়ী অংশের এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে মনিরামপুরের প্রভাবশালী খোকন সরকার আস্তে আস্তে মাটি ভরাট করতে করতে জোলার অর্ধেকাংশ দখল করে সেখানে গরুর খামার করেছে। খোকন সরকারের দেখাদেখি অনেকেই আস্তে আস্তে দখল করে কাঁচা ঘর, টিনের বেড়া ও কেউ বাথরুম তৈরি করেছে। মনিরামপুরের অংশের জোলা এভাবেই দখল হয়ে যায়।

কয়েক বছর আগে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাসিব সরকার নকশা অনুযায়ী জোলাটি উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর খোকন সরকারসহ কয়েকজন আবার জোলাটি আস্তে আস্তে বাঁশের পাইলিং দিয়ে কৌশলে দখল করা শুরু করে।

খোকন সরকার নিজেকে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্তা ব্যক্তিদের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করে যে কারণে কেউ মুখ খোলেনি। কেউ কেউ প্রতিবাদ করেও কোনো কাজে আসেনি। এদিকে, জোলার উত্তরে দারিয়াপুর মৌজার রামবাড়ী অংশে এসএ, আরএস নকশা অনুযায়ী রেকর্ডিং সম্পত্তিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় কাজ করতে গিয়েও বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে মানুষ।

এ বিষয়ে খোকন সরকার বলেছেন, এই নদী প্রাচীনকাল থেকেই এখান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে। পূর্বের রেকর্ডে স্পষ্ট নদী উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব অঞ্চলের জায়গার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বার্থান্বেষী মহল নদী আস্তে আস্তে গিলতে শুরু করে। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে প্রভাব খাটিয়ে আরএস রেকর্ডে নিজের নামে করে নেয়।

খোকন সরকারের এমন বক্তব্যকে হাসি-তামাশা হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। আবার কেউ বলছেন নিজেই দখল করে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন খোকন সরকার। এদিকে, রামবাড়ী গ্রামসহ শাহজাদপুরের আপামর জনসাধারণ নকশা অনুযায়ী জোলাটি পুনরুদ্ধারের জোর দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, খোনকারের জোলা সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অ্যাসিল্যান্ডকে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নদী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close