গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২৮ নভেম্বর, ২০২২

চলনবিলের সাদা ভূষণ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চলনবিল এলাকায় সাদা বক। ছবি সম্প্রতি তোলা গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী

সম্প্রতি চলনবিলে এক ঝাঁক দেশীয় কানি ও সাদা বকের দেখা মিললো। এ যেন সবুজের মাঝে সাদার সমরোহ। এখনও এই অঞ্চলে সাদা বক ও দেশীয় কানি বকের ঝাঁককে বলা হয় চলনবিলের সাদা রূপ। সার বেধে সাদা বকের বসে থাকা দূর থেকে যে কারো নজর কেড়ে নেয়।

আমাদের বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল জায়গা দখল করে আছে বিভিন্ন রকমের বক। কখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা, কখনও দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের সবুজ গালিচার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিত ঝাঁকে ঝাঁকে এই সাদা বক। আবার কখনও দলবদ্ধ হয়ে উড়তে উড়তে একসময় মিশে যেত দূর আকাশ নিলীমায়। এক বিল থেকে আর এক বিলে অথবা দিন শেষে কোন বন কিংবা বাঁশঝাড়ে নিজ নীড়ে ফিরে যেত এই বকগুলো। প্রাকৃতিক নান্দনিক পাখি বক। তবে দুঃখজনক যে, বকের কলরব এখন শুধুই স্মৃতি।

পাখি গবেষকদের মতে, আমাদের দেশে রয়েছে পাঁচ প্রজাতির সাদা বক। আকারে গড়ে ৪৫ থেকে ১শ’ ৫০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। পা ও লম্বা ঠোঁট ছাড়া এদের সারা দেহ সাদা পালকে আবৃত। চলন বিল বিশাল হওয়ায় এবং এখানে খাদ্য পাওয়ায় সব প্রজাতির বকের বিচরণ ক্ষেত্র এটি। সুবজ ঘাস বা ফসলের খেতে ওঁৎ পেতে থাকে মাছ শিকারের সন্ধানে। কিন্তু জলাবায়ু পরিবর্তন আর গাছ উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে বক যেন আমাদের জনবসতি থেকে অভিমানেই দূরে চলে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চলন বিল, কামারখন্দের জবোখালিসহ বিভিন্ন বিলে প্রচুর বক দেখা যেতো। সন্ধ্যা হলেই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠতো চারপাশ। তবে এখন সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।

শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, এক সময় খেত-খামারে কানি ও সাদা বক দেখা গেলেও এখন চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে দু’ একটা দেখা গেলেও শিকারিরা ফাঁদ পেতে সেগুলো ধরে ফেলেন ও বিক্রি করে দেন। সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় বিলুপ্তির পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাদা বক। বিল-নদী ও জলাশয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখন খাবারের সন্ধানে খুব কম সংখ্যায় আসে বক। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, গাছপালা নিধন ও শিকারসহ নানা কারণে প্রাণির দেখা আগের মত আর মেলে না।

কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ জানান, আগে জবখালি, কর্ণসূতি, কৃষ্ণদিয়ার বিলে বিপুল সংখ্যায় বক দেখা যেত। এরা ঝাঁক বেধে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু নানা কারণে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, মিঠাপানির জলাশয়ে এদের বিচরণ। সাধারণত এরা মাছ, পোকামাকড়, শামুক, ঝিনুক ও ব্যাঙ খেয়ে বেঁচে থাকে। নদী, খাল-বিল, হাওর, পুকুর, ডোবায় এদের দেখা যায়। আমাদের দেশে সাদা বকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। শষ্য ক্ষেতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার ও জলাশয়ে পানি না থাকার কারণে বক আজ বিলুপ্তির পথে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চলনবিল,সিরাজগঞ্জ,পাখি,সাদা বক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close