এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

  ২৬ নভেম্বর, ২০২২

কালের সাক্ষী ভবতারিণী কুটীর

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মধুমতির তীরঘেষাঁ ছোট্ট একটি গ্রামের নাম চাঁদড়া। ছোট এই গ্রামটিতে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবতারিণী কুটীর। ফরিদপুরের দক্ষিণের শেষ প্রান্তে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ভবতারিণী কুটীরের অবস্থান।

কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়িটি এলাকার ঐতিহ্য বহন করে চলছে। স্থানীয় ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এই জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণ করে পর্যটক কেন্দ্রে রুপান্তর করার।

জানাগেছে, ১৯৩৫ সালে (বাংলা ১৩৪২ আশ্বিন) জমিদার গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় ভবনটি প্রতিষ্ঠা করেন। লাল বর্ণের দোতলা বিশিষ্ট মূল ভবনের পাশে রয়েছে লাট্টু ঠাকুরের বাড়ি। ভবনটির সামনে দাঁড়ালে ব্রিটিশ আমলে চুন-সুর্কি দিয়ে নির্মিত স্থাপত্য-কৃতির নিদর্শন আজও মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। ভবনটিতে প্রধান প্রবেশদ্বারে ফলক নামায় লেখা আছে জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরীয়সী ভবতারিণী কুটীর ১৩৪২ আশ্বিন।

ভবনের নীচের তলায় রয়েছে বৈঠক খানা এবং উপরে জমিদারের পারিবারিক শয়ন কক্ষ। পূর্বে উপরে ওঠার জন্য কাঠের হাতল বিশিষ্ট সিঁড়ি ছিল। বর্তমানে হাতল ভেঙ্গে গেছে তবে সিঁড়ি দিয়ে এখনো উপরে ওঠা যায়। ১০ কক্ষ বিশিষ্ট জমিদার বাড়িতে ৫ টি দরজা এবং ১৬ টি জানালা আছে। উপর তলায় লোহার রেলিং এবং টিনের চাল যুক্ত বারান্দা ছিল এখন তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ভবনের উপর তলায় একটি লোহাড় সিন্দুক আছে যা সংরক্ষণের ওভাবে মরিচা ধরেছে। বাড়ির মধ্যে একটি রান্না ঘর আছে। জমিদার গির্জাকণ্ঠ সম্পর্কে জানা যায় প্রথম জীবনে তিনি ঝামার (মোহাম্মদপুর,মাগুরা) নায়েব ছিলেন। সেখান থেকে অনেক অর্থ সম্পদের মালিক হলে চাঁদড়া গ্রামে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মহুরি ছিলেন কেশব চন্দ্র চন্দ।

জমিদারের তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলের নাম জানা গেছে বড় ছেলে ব্যাচা মুখোপাধ্যায় এবং ছোট ছেলে শিবুপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তৎকালীন সময়ে মধুমতি নদী ছিল জমিদার বাড়ির সামনে। জমিদারের বড় বড় নৌকা ছিল, নৌকাগুলি বাড়ির সামনের ঘাটে বাধা থাকত। গির্জাকণ্ঠ বাড়ির সামনে গ্রাম্য হাট চালু করেন। এখন আর সেই হাট বসে না। নদীয়ার চাঁদ বাজারের পশ্চিম পার্শ্ব গির্জাকণ্ঠের নামনুসারে গির্জার চর নামে পরিচিত।

জমিদার বাড়ির বাঁ দিকে একটি নারায়ণ মন্দির আছে পূর্বে মন্দিরটিটে পাথরের নারায়ণ মূর্তি ছিল। এখন আর নারায়ণ মূর্তি নেই এবং পূজাও হয় না। পাশেই ছিল দুর্গা মন্দির সেটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

মন্দিরটির ফলক নামায় বর্ণিত আছে...‘‘ স্বর্গীয় পূজাপদ মহাপুরুষ রামচাঁদ বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁহার দ্বীন সন্তান মনিকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় দ্বারা এই ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হইল। ১৩৪৪ বৈশাখ’’ মনিকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেশী ছিলেন। আরেক প্রতিবেশী মনিনন্দ্রনাথের বাড়ির ধ্বংস স্তূপ এখনও চোখে পড়ে। জমিদার বাড়ির কিছু অংশ মধুমতিতে বিলীন হয়ে গেছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জমিদার গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ সরকার জমিদার গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িটি খাস জমি হিসাবে আলফাডাঙ্গা উপজেলা ভূমি অফিসের অধিনস্ত করে নেয়।

এলাকার সহকারী স্কুল শিক্ষক নৃপেন্দ্র নাথ বলেন, এ কুঠিরটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও দিন দিন সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলছে। বিভিন্ন স্থান থেকে এখনও মানুষ দেখতে আসে, ছবি তুলে চলে যায়। এটি অত্র এলাকার একটি পুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শন। সরকারের উচিৎ এটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা।

এ প্রসঙ্গে আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, এটি অত্র অঞ্চল তথা আলফাডাঙ্গার একটি পুরনো ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। এটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভবতারিণী,কুটীর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close