খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)

  ২৪ নভেম্বর, ২০২২

রাণীশংকৈলে ইটভাটায় আগুন দেওয়া নিষেধ 

ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈল সদরে একটি ইটের ভাটা। ছবি বৃহস্পতিবার তোলা - প্রতিদিনের সংবাদ 

ভাটায় সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাঁচা ইট। ভাটাতেই ইট পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে চুল্লি। এখন শুধু আগুন দেওয়ার পালা। সবুজ সংকেত পেলেই এ মৌসুমের জন্য ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হবে। কিন্তু বাধ সেধেছে প্রশাসন। ইটভাটায় আগুন দেওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে। এতেই বেশ বিপাকে পড়েছের ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ইটভাটার মালিকেরা।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসন বলছে, ঠাকুরগাঁও জেলার ইট ভাটাগুলোতে আগুন না দিতে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আদেশের কারণেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাটায় আগুন দিতে নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে ইট সংকটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও লালমনিরহাট মিলে চার জেলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুসারে লাইসেন্স ব্যতীত কোন ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না মর্মে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামক সংগঠন হাইকোটের এক বেঞ্চে গত ৬ নভেম্বর রিট করেন।

রিটের প্রাথমিক শুনানিতে অবৈধ ভাটা ৭দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বন্ধের দুই সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ ভাটার তালিকাসহ একটি প্রতিবেদনে আদালতে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর গত ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

এছাড়াও এসব জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা কেন বে-আইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৪, ৮, ১৪, ও ১৮ ধারা অনুসারে অবৈধ ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ২৪ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে ইট ভাটায় এখনও আগুন দিতে না পারায় ভাটার শত শত শ্রমিক বেকার দিননিপাত করছে। তাছাড়াও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ইট সংকটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। ভাটা শ্রমিকেরা বলছে, এভাবে দিনের পর দিন বসে থাকলে সংসার চলবে কীভাবে।

রাণীশংকৈল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সামিয়েল মার্ডি জানিয়েছেন, ইট সংকটের কারণে তার উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ১শত ৫০টি বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। স্থবির হয়ে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসের প্রায় ১০টি বাড়ি।

রাণীশংকৈল উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী কে এম সাব্বিরুল জানিয়েছেন, ইট সংকটের কারণে তার উপজেলায় ৪টি তিনতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের কাজ স্থবির হয়ে রয়েছে।

উপজেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, এমনিতে যখন তখন রড সিমেন্ট বালুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে আবার ভরা মৌসুমেও ভাটাগুলো এখনো চালু হয়নি, ইটও পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে রয়েছে। তিনি সরকারের উচ্চ মহলে সবিনয় অনুরোধ করেছেন খুব দ্রুত বন্ধ ইটভাটা গুলো যেন চালু করা হয়।

রাণীশংকৈল উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আহাম্মদ হোসেন বিপ্লব বলেন, ভাটা চালুর পূর্বে সরকারের ভূমি উন্নয়ন কর ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাটসহ বিভিন্ন সরকারি ফি পরিশোধ করে ভাটা চালু করা হয়। ভাটার ইট দিয়ে এ উপজেলার সরকারি উন্নয়ন কাজগুলো সম্পাদন হয়ে থাকে। অথচ প্রয়োজনীয় ইটভাটাগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টে যে রিট হয়েছে তা আপিল করার জন্য প্রক্রিয়া করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, এমনিতেই অবৈধ ভাটায় আগুন দেওয়া যাবে না। এদিকে হাইকোর্ট আবার অবৈধ ইটভাটা গুলো চালুর উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাই সব অবৈধ ইটভাটায় ইট পোড়ানো বন্ধ রয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাণীশংকৈল,ইটভাটা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close