চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আবাসিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাসা-বাড়ির আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে আবাসিক এলাকাগুলোয়। আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ফ্ল্যাটের মালিক ও বাসিন্দারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।

বিশেষ করে নগরীর অন্যতম বড় ওয়ার্ড ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদের ১২টি আবাসিক এলাকার বাড়ির মালিক ও বাসিন্দারা আবর্জনা দিতে সাহস পাচ্ছেন না। বেসরকারি সংগ্রহকারীরা ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করায় তারা নিজেদের সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর মনে করে তারা মেয়রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তবে মেয়র এখনো কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাট মালিকরা চাইছেন, নিজস্ব ব্যবস্থপনায় তারা আবর্জনা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনে ফেলবেন।

এ বিষয়ে ২৪নং ওয়ার্ড উত্তর আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা সমন্বয় ফোরামের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের আবাসিক এলাকাগুলোর আবর্জনা নিজস্ব ব্যবস্থপনায় সংগ্রহ করে আসছি। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর সে হিসেবে সব কিছু চিন্তাভাবনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, যারা ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে যাবেন তাদের সবার মন-মানসিকতা এক না। যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তার দায় দায়িত্ব কে নেবে। আমরা বিষয়টি মেয়র সাহেবকে বুঝিয়ে বলেছি। এখন তিনি কি সিদ্ধান্ত দেন তার উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যত পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আবাসিক এলাকার পক্ষ থেকে ২টি ট্রাক কিনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাসা-বাড়ির আবর্জনা সংগ্রহ করে ডাম্পিং জোনে ফেলা হবে। কোন অবস্থাতেই বেসরকারি কাউকে ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করতে দেয়া হবে না।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাসা-বাড়ির আবর্জনা সংগ্রহ করার কাজটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া শুরু করে সিটি করপোরেশন। অভিযোগ রয়েছে, কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের কাজটি দেয়া হয় একজন সাবেক কাউন্সিলরকে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলরের লোকজন বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে কারও কাছ থেকে ২০০ টাকা, কারও কাছ থেকে ১০০ টাকা করে গণহারে আদায় করছে। যার কোন জবাবদিহিতা নেই। অভিযোগ উঠেছে, টাকা না দিলে দিনের পর দিন আবর্জনা ফেলে রাখে। সবার টাকা দেয়ার ক্ষমতা না থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বাসা-বাড়ির মালিক-ভাড়াটিয়াদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

সূত্র জানায়, বাসা-বাড়ির আবর্জনা সংগ্রহ করার অন্যতম কাজ সিটি করপোরেশনের। এ হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে একটি পরিচ্ছন্নতা বিভাগও রয়েছে। এ বিভাগে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। অপরদিকে এই কর্মচারীদের বিশাল অংশকে অকেজো করে নিয়োগ করা হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের বড় একটি অংশ বসে বসে বেতন নিচ্ছে। গৃহকরের বিনিময়ে এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, সড়ক সংস্কার, মশার ওষুধ দেয়া থেকে শুরু করে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহও করপোরেশনের কাজ। আবাসিক এলাকাগুলো থেকে প্রতি বছর করপোরেশন ট্যাক্স হিসেবে বিপুল টাকা আয় করে। করপোরেশনে অন্যান্য করের সাথে আবর্জনা সরানোর জন্য ৭ শতাংশ করও দেয়া হয়। কিন্ত সিটি করপোরেশন সঠিকভাবে এ কাজটি করতে না পারার কারণে আবাসিক এলাকাগুলোর ফ্ল্যাট মালিকরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বল্প টাকা নিয়ে কাজটি ভালোভাবেই সম্পন্ন করে আসছেন। যারা ১০০ টাকার দেয়ার ক্ষমতা রাখেন তাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা আর যারা ১০০ টাকা দিতে অপারগ তাদের কাছ থেকে সহনীয় মূল্য নিয়ে কাজটি করা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, নগরীর ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলরের প্রতিষ্ঠানটি বিনা টেন্ডারে কাজ নিয়ে আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাট মালিকদের আবর্জনা সরানোর নাম করে ১০০-২০০ টাকা চাঁদা দাবি করে চিঠি দিয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে, বছর বছর এ টাকা বাড়ানোর। বেসরকারি এ কোম্পানির টাকা বাড়ানোর হার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে সংশয়ও বাড়ছে। অথচ আবাসিক এলাকাগুলো হতে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে অদ্যাবধি কোন প্রকার ঝামেলা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক এলাকাগুলো ময়লা-আবর্জনার কাজ সুষ্ঠুভাবে করে আসছে। হঠাৎ করে কথিত এক কোম্পানিকে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ দেয়ার কারণে এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে নানা বিশৃঙ্খলা। এ নিয়ে করপোরেশনের পক্ষ থেকে কেউ কথা বলতে চাননি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম,আগ্রাবাদ,নিরাপত্তা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close