তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২০ নভেম্বর, ২০২২

চলনবিলে হোটেল ব্যবসা লাটে

ফাইল ছবি

তাড়াশের সদর বাজারে প্রয়াত অনিল কুমার সাহার হাত ধরে শুরু হওয়া ‘সাহা এণ্ড সন্স’ নামের খাবার হোটেল চলছে পঞ্চাশ বছর ধরে। তাঁর পরলোক গমনের পর ব্যবসার হাল ধরেন ছেলে আশিস কুমার সাহা। এ হোটেলের আয় দিয়েই স্বচ্ছন্দে চলে তাঁদের ৫ সদস্যের সংসার। সম্প্রতি হোটেলের ব্যবসায় ছন্দ পতন ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ধাপে ধাপে চাল, আটা, ভোজ্য তেল, জ্বালানির মূল্য বাড়ার সাথে সামাঞ্জস্য রেখে কিছুদিন পরপর খাবারের দাম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আর বাড়ালেও ক্রেতাদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে। কম লাভেও কাস্টমার পাচ্ছেন না তারা। শুধু আশিস কুমার সাহাই নয়, এভাবে লাটে উঠার উপক্রম হয়েছে চলনবিল অঞ্চলের প্রায় পাঁচ শতাধিক ক্ষুদ্র এবং মাঝারি খাবার হোটেলের ব্যবসা। চলনবিল অঞ্চলে খাবার হোটেল ব্যবসার এই দুর্দিনে অনেকই খরচ কমাতে ব্যবসার আকার ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে লাভের অঙ্কও ছোট হয়ে আসছে।

জানা গেছে, চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও জনপদের প্রায় পাঁচ শতাধিক ক্ষুদ্র এবং মাঝারি খাবারের হোটেল আছে। তাড়াশের রানীর হাট বাজারের শাপলা হোটেলের মালিক রাজু আহমেদ জানান, এ সব হোটেলে রাধুনি, হোটেল বয়সহ বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় তিন হাজার হোটেল শ্রমিক। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে এসব হোটেলে। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধগতির কারণে হোটেল ব্যবসা নির্ভর জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার হোটেল মালিক আব্দুল আজিজ, মোবারক হোসেন জানান, বর্তমানে হোটেলে গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি হোটেল ব্যবসায় মন্দাবস্থতা বিরাজ করছে।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৭ কেজি আটার বস্তার দাম ছিল ৯০০ টাকা, পরর্বতীতে ১ হাজার ৫০ টাকা, কিছু দিন পরে ১ হাজার ২০০ টাকা, তার পরে ১ হাজার ৬৫০ টাকা এমনি করে মাসে মাসে ধাপে ধাপে বর্তমান ওই ৩৭ কেজি আটার বস্তার দাম এখন ২ হাজার ২৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আবার জানুয়ারি মাসে সুপার ভোজ্য তেল প্রতি লিটার ৯০ টাকা ছিল, এখন তা ১৬০ টাকা, পামওয়েল জানুয়ারি মাসে ছিল প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮৮ টাকা। তা এখন ১৩৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। চিনি জানুয়ারি মাসে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও চলতি মাসে তা ১০৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নাজির শাইল চাল গত জানুয়ারি মাসে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন ওই চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। এ্যাংকার ডাল জানুয়ারি মাসে প্রতি কেজি ছিল ৩৫ টাকা, এখন নভেম্বর মাসে তা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। পাশাপাশি ৮০ টাকা কেজি ধরে মোটা মুসরের ডাল এ মাসে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। আবার গত জানুয়ারি মাসে প্রতি পিচ ডিম বিক্রি হতো ৬ টাকা তা বর্তমানে প্রতি পিচ ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি খাবার হোটেলের জ্বালানি খরচও বেড়ে গেছে। গত জানুয়ারি মাসে প্রতি মণ খড়ি (লারকি) ১২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও তা বর্তমানে ২০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে প্রতি পিচ রান্না করা গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল ৮৫০ টাকা, তা ধাপে ধাপে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। এতে করে খাবার হোটেলে ব্যবহৃত সকল পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া হোটেল মালিকদের পুঁজিও বাড়াতে হচ্ছে। যার সার্মথ্য অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি হোটেল মালিকদের নেই।

আবার ভোক্তা পর্যায়ে হোটেলের খাবারের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, এখন প্রতি পিচ ডিম ভাজি ১৫ টাকার স্থলে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভাত প্রতি প্লেট ১৫ টাকার বিপরীতে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পরোটা প্রতি পিচ ১০ টাকায় বিক্রি হলেও তা ওজন কমেছে ৮০ গ্রামের স্থলে ৬০ গ্রাম। অনুরূপ ৩০ গ্রাম ওজনের সিঙ্গারা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায় আর ৬০ গ্রাম ওজনের সিঙ্গারা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায় বলে জানান, তাড়াশের মা হোটেলে খাবার খেতে আসা রবিউল, রহমান, ফরিদসহ অনেকেই।

এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে একজন হোটেল শ্রমিকের মজুরি ছিল প্রকার ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বর্তমানে ওই শ্রমিককেই দিতে হচ্ছে দিন হাজিরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা এমনটি জানান, গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল হোটেলের মালিক আবু হাসেম। তিনি আরো জানিয়েছেন, খাবার তৈরির সকল পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে সেই সাথে চলনবিলের বেশির ভাগ হোটেলেই গ্রাহকের সংখ্যাও তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। ফলে বর্তমানে খাবার হোটেল ব্যবসায় চরম মন্দবস্থায় বিরাজ করছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবু সাইদ তালুকদার জানান, দফায় দফায় খাবার পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা হোটেল চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে করে বেশি পুঁজি খাটিয়ে লভাংশ কমে যাচ্ছে। ফলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি হোটেল ব্যবসা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চলনবিল,হোটেল ব্যবসা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close