মো.রবিউল ইসলাম, গাজীপুর থেকে
গাজীপুর মহানগর আ.লীগ সম্মেলন : নেতাকর্মীদের উদ্দীপনা, পদপ্রত্যাশীরা সরব
দীর্ঘ ২০ বছর পর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে কাল শনিবার। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, পাশাপাশি সরব হয়ে উঠেছেন পরবর্তী কমিটির পদপ্রত্যাশীরা।
ঐতিহাসিক রাজবাড়ী মাঠে সম্মেলনের প্রস্তুতি এখন শেষপর্যায়ে। আশপাশের এলাকা ছেয়ে গেছে পদপ্রার্থীদের ব্যানার আর ফেস্টুনে। তারা ব্যক্তিগত ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘন ঘন সাক্ষাৎ ও কুশলবিনিময় করে চলেছেন। কর্মীদের কদর বেড়েছে।
সভাপতি পদে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে আতাউল্লাহ মণ্ডল, মো. মতিউর রহমান মতি, অ্যাডভোকেট আবদুল হাদী শামীম, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, আফজাল হোসেন সরকার রিপনসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় এসেছে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের নাম শোনা যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের মুখে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সমর্থনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলে জানা গেছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো গাজীপুরবাসী এবং তৃণমূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাহিদ আহসান রাসেলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বাস আর আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। অসুস্থ নেতাকর্মীর খোঁজখবর রাখেন। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন। যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে একের পর এক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন তিনি।
সভাপতি প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান টঙ্গী পৌরসভার একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী রাজনীতির এই দিকপাল একজন প্রবীণ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। দুর্দিনে গাজীপুরে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত রেখে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের প্রতি তার অবদানের কথা সবাই জানেন।
আরেক বর্ষীয়ান রাজনীতিক আতাউল্লাহ মণ্ডল মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে গাজীপুরে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার মহানগর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী বলে জানা গেছে।
আরেক বর্ষীয়ান রাজনীতিক মতিউর রহমান মতি। তিনি ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপির ছোট ভাই। ১৯৭৯ সালে টঙ্গী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নির্বাচিত জিএস ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় বৃহত্তর টঙ্গী থানা ছাত্রলীগ। ১৯৮৩ সালে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, বর্তমানে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘আমি দল থেকে কিছু পাওয়ার লোভে রাজনীতি করি না। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শকে ভালোবেসে জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে রাজনীতি করছি। আমি দলকে যেমন ভালোবাসি; তেমনি তৃণমূল নেতাকর্মীরাও আমাকে ভালোবাসেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে অন্তরে ধারণ করে তার হাতকে আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী দুর্গ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাব এবং দলকে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করব।’
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি ১৯৮৬ সালে কাউলতিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, ১৯৮৭ সালে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য, ১৯৮৮ সালে জয়দেবপুর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলসহ সচেতন মহলে সাড়া পড়েছে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিক আফজাল হোসনে সরকার রিপন এবার সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ২০০২ সালে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ছাত্র সংসদের মনোনীত ভিপি ছিলেন। ২০০৩ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসম্পাদক, ২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক নির্বাচিত হন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, গাজীপুরে এমন একটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন যার সুশিক্ষা ও সমৃদ্ধ রাজনৈতিক অতীত আছে। পাশাপাশি আছে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দক্ষতা। যিনি সহজাত নেতৃত্ব দিয়ে শান্তিপ্রিয় জনপদ গাজীপুরকে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার কবল থেকে মুক্ত করতে পারবেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।