আরাফুল ইসলাম, শ্রীপুর (গাজীপুর)

  ২২ অক্টোবর, ২০২২

মাওনা চৌরাস্তায় শ্রম বিক্রির হাট

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে মাওনা চৌরাস্তায় উড়াল সেতুর নিচে গড়ে উঠেছে শ্রম বিক্রির হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন শত শত শ্রমজীবী মানুষ আসেন তাদের শ্রম বিক্রি করতে।

সূর্য উঠার আগেই মাওনা চৌরাস্তায় বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণপাশে উড়াল সেতুর নিচে চোখে পড়ে মানুষের জটলা। ফজরের আজানের পরপরই জড়ো হতে শুরু করেন। কারো হাতে কোদাল টুকরি, কারো কাঁদে শ্রমের যন্ত্রপাতি ভর্তি ব্যাগ। কেউ দেখে মনে হবে যানবাহনের জন্যই বুঝি অপেক্ষা করছে। কিন্তু সড়ক দিয়ে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ছুটে চললেও কারো কোনো তাড়াহুড়ো নেই। মূলত নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে শ্রম বিক্রিই ওদের কাজ। নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে একদিন নয়, প্রতিদিনই ভোর থেকেই অবস্থান থাকে ওদের।

প্রায় ৫০ বছর ধরে মাওনা চৌরাস্তায় এ শ্রমিকের হাট গড়ে উঠেছে। এসব শ্রমিক ধান বোনা ও কাটা থেকে শুরু করে খেত-খামার এবং গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। আরেক শ্রেণির মানুষ আসে শ্রম কিনতে।

সরেজমিনে শনিবার (২২ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ওই বাজারে শ্রম বিক্রির অপেক্ষায় থাকা শ্রমিকদের এমন উপস্থিতি চোখে পড়ে। নেত্রকোনার দুর্গাপুর হালুয়াঘাট, শেরপুর, জামালপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখানে এসে শ্রমিকের কাজ করেন। নিজ নিজ এলাকায় কাজের অভাব বলে শ্রম বিক্রির জন্য এখানে অবস্থান করেন প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। কৃষকের খেতে শ্রম দিয়ে প্রতিজনে মজুরি পান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। পাশাপাশি কৃষকের ঘরেই দুবেলা পেটপুরে খাওয়া।

কথা হয় শেরপুর নালিতাবাড়ী থেকে আসা সোহরাব (৫০) এর সঙ্গে। তিনি জানান, ভিটেমাটিসহ তার ১০ শতাংশ জমি ছাড়া আর কিছু নাই। দুই ছেলে এক মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। তবে আমন ও বোরো মৌসুমে নিজ এলাকা ছেড়ে এসব এলাকায় আসেন কাজের সন্ধানে।

সিলেট সুনামগঞ্জ থেকে আসা হাজেরা খাতুন ও ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে আসা মজিদসহ কথা হয় আরো চারজনের সঙ্গে। তারা জানান, নিজেদের এলাকায় কাজ কম, মজুরিও কম। তাই মাওনাসহ আশপাশের এলাকায় পরিবারসহ ভাড়া থেকে শ্রমিকের কাজ করেন। প্রতিদিন ভোর থেকেই কাজের জন্য এখানে এসে জড়ো হন। গৃহস্থের জন্য অপেক্ষা করেন। গৃহস্থের সঙ্গে চুক্তিতে মিলে গেলেই কাজে চলে যেতে হয়। যখন যেই কাজ পান সে কাজই করতে হয়। দিনভর কঠোর পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় বাসায় এসে গোসল করে নিশ্চিন্ত মনে ঘুম দেন। পরদিন ভোরেই এই বাজারে গৃহস্থের জন্য ফের অপেক্ষা করা। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে আসা কামাল ৫৫ জানান, ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ। এখন মাঠে মাঠে খেতের পরিচর্যার কাজ হচ্ছে। এরপর কৃষিভিত্তিক অন্য কাজ করবেন। তবে প্রতিদিনই কাজ পাওয়া যায় না।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শ্রীপুর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close