ইব্রাহীম ভূঁইয়া, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
অসময়ে যমুনায় ভাঙন, ভূঞাপুরে ঘরবাড়ি স্কুল মাদ্রাসা জমি বিলীন
অসময়ে যমুনা নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়েছে। নদীতে বইছে প্রবল শ্রোত। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ভাঙছে নদীর দুই কূল। নদীতে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসা। দিশাহারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। তলিয়ে গেছে ভুট্টা, বাদাম, কার্তিক কলাই, মরিচ, মুলা, শাক-সবজিসহ অন্যান্য বীজ তলা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
গত কয়েক দিনে উজান থেকে নেমে আসা যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের চরশুশুয়া, রামাইল, বাসুদেবকোল গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনার পূর্ব পাড়ের চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, গাবসারা ইউনিয়নের জুংগীপুর, রুলীপাড়া, কালিপুর, ভদ্রশিমুল, রেহাই গাবসারা, নিকলাপাড়া এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। অর্জুনা ইউনিয়নের, শুশুয়া, বোরার বয়ড়া, রামাইলও দেখা দিয়েছে একই রকম নদীভাঙন। কয়েক দিনের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক বসতভিটা। বাসুদেবকোল ফকির মঈন উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় ও ভদ্র শিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনার তীব্র ভাঙনে হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এদিকে চলতি বছরে প্রথম ধাপের বন্যায় বসতভিটা রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে স্থানীয়রা। পানি কমে গেলে ভাঙনের মাত্রা কমে আসে। সে সময় তারা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের বাসুদেবকোল এলাকায় ভাঙনের কবলে পড়ে অর্ধশত বসতবাড়ি, সাতটি মসজিদ, এত কওমি মাদ্রাসা, দুটি বাজার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বাসুদেবকোল ফকির মঈন উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, বাসুদেবকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ভাঙনকবলিত এলাকার মো. ছাকমান বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমে আমার বসতবাড়ি কোনো ক্ষতি না হলেও এই অসময়ে বন্যায় আমার বসতবাড়ি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বাসুদেবকুল এলাকার চান মিয়া বলেন, অসময়ের বন্যা আমার জমির ফসল ও ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় থাকব। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একই এলাকার বাবলু, শুকুর আলী, আলী আকবরসহ আরো অনেকে।
তাদের অভিযোগ প্রশাসন যদি ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত তাহলে আমাদের এত বড় ক্ষতি হতো না। বাসুদেবকোল ইসলামিয়া দারুল সুন্নাহ কওমি মাদ্রাসার মোহতামিম জাকেরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসায় প্রায় ৩০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। মাদ্রাসাটি নদীতে বিলীন হয়ে গেল।
অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (৮নং ওয়ার্ড) মো. দোলোয়ার হোসেন দিলসাদ জানান, অসময়ের বন্যায় দুটি ব্রিজ, ১০-১২টি পরিবারের ঘরবাড়ি, ৭টি মসজিদ, ১টি কওমি মাদ্রাসা সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ময়েন উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়টি হুমকির মুখে রয়েছে।
গাবসারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহআলম শাপলা জানান, প্রতিদিন কোনো না কোনো বাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ৯৪ পরিবার আর এ সময় ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুই হাজার একর জমির রবিশস্য বিনষ্ট হয়েছে। প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এখনো আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
অর্জুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম মাহবুব জানান, চর এলাকার প্রতিদিনই নতুন করে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোডের্র (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে সময়-অসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে দেশ। তবে আমরা টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নের চর এলাকায় পরিদর্শন করে পদক্ষেপ নেব।