মো. মোস্তাফিজ, তালতলী (বরগুনা)

  ১১ অক্টোবর, ২০২২

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা 

তালতলীর জেলেদের দিন কাটছে জাল সারাই করে

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট আমখোলা গ্রামের সোরাপ চাপরাশি। পেশাদায় একজন জেলে। সমুদ্রে মাছ শিকার করে সংসার চলত তার। কিন্তু ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সরকার ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ও নদ-নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাই বেকার সময় পার করছেন তিনি। স্ত্রী, তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে কষ্টেই যাচ্ছে যাচ্ছে তার দিন।

সোরাপ চাপরাশি বলেন, ‘আগে মাছ ধরতাম, প্রতিদিন আয় রোজগার ছিল। কিন্তু এখন মাছ ধরা বন্ধ তাই কামাই নাই। আমাদের চাল দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখনো সেই চাল পাইনি। কবে চাল পাব তাও জানি না।’

একই অবস্থা পান্না মাঝির। মাছ শিকার করতে না পেরে তিনিও বেকার সময় পার করছেন। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তার। তিনি জানান, বেকার জেলেদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে। জেলে পুনর্বাসনের সহায়তার চাল এখনো পাননি তিনি। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সোরাপ চাপরাশি ও পান্না মাঝির মতো যেন একই অবস্থা তালতলীর নিবন্ধিত ৭ হাজার ৮২১ জন জেলের। এক দিকে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে চাল বিতরণে বিলম্ব হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তালতলীর জেলেরা।

পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও জেলেদের নামে বরাদ্দ চাল এখনো পৌঁছায়নি। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। জেলে নেতারা বলছেন, তারা সব সময় দাবি করে আসছেন নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই যাতে জেলেদের চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও জেলেরা চাল পাচ্ছেন না।

জেলেরা জানান, মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সব জেলেই বেকার। বিকল্প কর্মসংস্থানেও যেতে পারছেন না তারা। জেলেরা মনে করছিলেন, চাল পেলে হয়তো কিছুটা হলেও তাদের সংকট দূর হবে। কিন্তু একদিকে আয়-রোজগার বন্ধ অন্যদিকে ধারদেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন তারা। ধারদেনা করে চলতে গিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। অন্যদিকে পেটের টানে কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারে গেলে তাদের জেল-জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

ওই ঘাটে গিয়ে কথা হয় জেলে ইসমাইল ও সবুজের সঙ্গে। তারা জানান, এ বছর সমুদ্রে তেমন মাছ শিকার করতে পারেননি। দিন দিন লঘুচাপ, অতিরিক্ত ঝড়বৃষ্টি হওয়াতে বেশি সময় ঘাটে থাকতে হয়েছে। এর ভেতরে আবার অবরোধ সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ, আমরা এখন বেকার। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কীভাবে সংসার চালাব সেই চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছি। এনজিও কিস্তির টাকাও দিতে পারছি না।

জেলেরা আরো বলেন, আমরা নদীর কাজ জানি, অন্য কাজ জানি না। তাই কেউ আমাদের অন্য কাজেও নিতে চায় না। খেতেখামারেও কাজ পাচ্ছি না। তাই এখন আমাদের পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটত হয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম, তালতলী উপজেলায় নিবন্ধিত ৭ হাজার ৮২১ জন জেলের মধ্যে ৬ হাজার ৭৪৬ জেলের জন্য ২৫ কেজি করে চাল এসছে। জেলেদের বরাদ্দ চাল দ্রুত বিতরণ করা হবে। এদিকে তালতলীতে প্রায় অর্ধলক্ষ জেলে থাকলেও নিবন্ধনের আওতায় এসেছেন ৭ হাজার ৮২১ জন জেলে। এদের মধ্য বরাদ্দ এসেছে ৬ হাজার ৭৪৬ জন জেলের। এতে নিবন্ধিত ১ হাজার ৭৬ জন জনসহ অনেক জেলে চাল থেকে বঞ্চিত হবেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইলিশ,জেলে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close