জাহিদুল হক মনির, শেরপুর

  ০৬ অক্টোবর, ২০২২

শেরপুরের গারো পাহাড়ে বাঘ আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

ভারত সীমান্তঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ১০ দিন ধরে অজানা হিংস্র বন্যপ্রাণীর আক্রমণে পাহাড়ি কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের প্রায় ১৫টি ছাগল কামড়ে আহত ও মেরে ফেলার ঘটনার পর থেকে মানুষদের মধ্যে এ আতঙ্ক শুরু হয়। এ অবস্থায় পাহাড়ি এলাকায় গবাদি পশু চরাতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, এই অঞ্চলে বাঘ নেমে এসেছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে প্রচারের (মাইকিং) ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান, রাংটিয়া রেঞ্জের গজনি বিট কর্মকর্তা মো. মকরুল ইসলাম আকন্দ। তবে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোনো মানুষ এ হিং¯্র বন্যপ্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়নি বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া, বাকাকুড়া নয়াপাড়া, গান্ধিগাঁও, হালচাটি, ছোটগজনী এলাকায় প্রায় ১০ দিন ধরে প্রায় ১৫টি ছাগল বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আহত ও মারা গেছে। আক্রমণের ভয়ে পাহাড়ি এলাকায় গবাদি পশু চরাতে, লাকড়ি সংগ্রহকারীরা ও গ্রামের শিশুরাও বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে।

কাংশা ইউনিয়নের গান্ধিগাঁও গ্রামের মো. শাহা আলী বলেন, পাহাড়ে আগে ছিল বন্যহাতির আতঙ্ক, এখন নতুন করে শুরু হয়েছে বাঘের আতঙ্ক। গত ৪ থেকে ৫ দিন আগে পাহাড়ের আমজাদ মরা নামক স্থানে রাতের বেলায় বাঘের মতো এক বন্যপ্রাণী দেখেছেন তিনি। ওই বন্যপ্রাণী দৈর্ঘ্যে ৪ ফুট ও এর উচ্চতা ৩ ফুট হতে পারে।

বাকাকুড়া নয়াপাড়া এলাকার মো. আইন উদ্দিন বলেন, রবিবার রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আমার দোকানে কয়েজন টিভি দেখছিলাম। এ সময় ওই বাড়ির একটি শিশু তার বাবার খোঁজে দোকানের কাছাকাছি এসে টর্চলাইট ধরলে একটি বন্যপ্রাণী শিশুটিকে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে শিশুর চিৎকারে সবাই দোকান থেকে বের হয়ে একটি ছোট বাঘ দেখতে পাই। আমরা সবাই চিল্লাচিল্লি শুরু করলে এটি বনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।

বাকাকুড়া ঢাকাইয়া মোড় এলাকার গোলেছা বেগম বলেন, আমরা পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে সংসার চালাই। কয়দিন ধরে বনের মধ্যে বাঘ আসছে, এমন সংবাদ শোনার পর থেকে ভয়ে আছি। আমার বাড়ির সামনের প্রতিবেশী গেগোল সাংমার দুটি ছাগলকে কামড়ে মেরে ফেলেছে বাঘ।

এমন আতঙ্কের পর বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে মানুষ ও বন্যপ্রাণী (হাতি ও বাঘ) দ্বন্দ্ব নিরসন ও ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনের জন্য এক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ।

সভায় বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক (প্রবি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি পাহাড়ে বাঘের আগমন ঘটেছে। এ পাহাড়ে ঘন বন রয়েছে, এটি যেকোনো বন্যপ্রাণীর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে। তবে স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, এটি বাঘ হওয়ার কথা নয়। এটি অন্য কোনো হিং¯্র বন্যপ্রাণী হতে পারে। তবে আমরা প্রাণীটি শনাক্ত করার জন্য কাজ করছি। পাশাপাশি জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, আমি ঘটনাটি শোনার পর থেকে গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে প্রাণীটি বাঘ কি না এটি কেউ শনাক্ত করতে পারেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ে একটি অজানা বন্যপ্রাণীর দেখা মিলেছে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে বন্যপ্রাণীটি মানুষের যেন ক্ষতি করতে না পারে, আবার প্রাণীটিকে মানুষ যেন হত্যা না করতে পারে- এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান ও বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ প্রদান করেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শেরপুর,বাঘ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close