এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

  ০১ অক্টোবর, ২০২২

বিলুপ্তির পথে ‘ঢ্যাপ-খই-মোয়া’

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা। এর সঙ্গে বিপন্নের পথে ‘ঢ্যাপ’। শাপলার ফলকেই ঢ্যাপ বলা হয়। নানা কারণে ফরিদপুরে প্রাকৃতিক জলসম্পদ হাওর-বাওড়, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। খাল-বিল-নদীতে ফোটে ওষধি গুণে সমৃদ্ধ নানা প্রজাতির শাপলা ফুল ও গুল্ম লতা। শাপলা ফুল দেখে মুগ্ধ হন না, এমন লোকের সংখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফুল যখন ফলে রূপান্তরিত হয় তাকে স্থানীয় ভাষায় ঢ্যাপ বলা হয়। এ ঢ্যাপের ভেতরে অনেক ছোট ছোট বীজ-দানা থাকে। আগেরকার দিনে এগুলো রোদে শুকিয়ে খইয়ের মতো ভেজে খাওয়া হতো। এ খই খুবই সুস্বাদু হয়।

এক সময় ফরিদপুরের নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার পল্লী গ্রামের বাজারগুলোতে ঢ্যাপ বিক্রি করতে দেখা যেতো। বিভিন্ন উৎসবে, বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসবে বিভিন্ন রকম খই নাড়ু-মুড়ির মধ্যে অন্যতম ছিল ঢ্যাপের খই ও ঢ্যাপের খইয়ের মোয়া। কিন্তু এসব আর দেখা যায় না বললেই চলে। শাপলা, শাপলার ফুল ও ফল ঢ্যাপ ফরিদপুর থেকে যেন বিলুপ্তির পথে।

বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, শাপলা বর্ষার দিনে বেশি জন্মায়। এখন আর আগের মতো বর্ষা হয় না। বৃষ্টি ও বর্ষার পানির অভাবে বর্তমানে খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে ইরি-বোরো, আউশ ধান, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, আলু, গমসহ বিভিন্ন জাতের রবিশস্য চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া পুকুর, আবদ্ধ জলাশয়গুলোতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় এ শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্রগুলো দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শাপলা ফুলের ডাটা স্থানীয় ভাষায় বলা হয় নাল, যা তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে ঢেপের খই, গুড় দিয়ে তৈরি করা ঢ্যাপের মোয়া নামে পরিচিত, যা আজ বিলুপ্তির পথে।

সালথা উপজেলার গুপিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা হরিদাশ মজুমদার বলেন, আগে দুর্গাপূজোর দিনে হিন্দুদের এমন কোনো বাড়ি ছিল না যেখানে ঢ্যাপের খই, মোয়া পাওয়া যেতো না। আর এখন ১০টি গ্রাম ঘুরলেও এই পূজোর দিনে ঢ্যাপের খই বা মোয়া মিলবে কিনা সন্দেহ। শাপলা ফল বা ঢ্যাপ হারিয়ে যেতে বসেছে।

বোয়ালমারী উপজেলার টোংরাইল গ্রামের শিক্ষিকা অঞ্জনা রানী বলেন, ছোটবেলায় মা-কাকিদের সঙ্গে ঢেপের খই ও ঢ্যাপের মোয়া তৈরি করতাম। বিয়ের পরেও শশুর বাড়িতে ঢ্যাপের খই, মোয়া তৈরি করেছি। দিন দিন শাপলা হারিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর হলো ঢ্যাপ চোখেই দেখি না।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, এখন আগের মতো বর্ষা হয় না। খাল-বিল বিলীন ও জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসই এ সুস্বাদু শাপলা ও ঢ্যাপ বিলুপ্তির কারণ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফরিদপুর,শাপলা,হাওর-বাওড়,খাল-বিল,পুকুর ও জলাশয়,ঢ্যাপ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close