কামাল হোসেন, রাজবাড়ী
পাট কাঠি বিক্রি করে কৃষকের বাড়তি আয়
রাজবাড়ীতে পাটের সুনাম রয়েছে বহু বছর আগে থেকেই। এরি মধ্যে কৃষকেরা তাদের পাট জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে নিয়েছে। পাটের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সেই সাথে পাটের কাঠি বিক্রি করেও বাড়তি লাভ করছে তারা।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজবাড়ীতে পাটের চাষ হয়েছে ৪৯ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। যা গত বারের তুলনায় ১ হাজার ৮০২ হেক্টর বেশি। এছাড়া এবার পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮০ হাজার ২০০ বেল হলেও এখন পর্যন্ত পাটের উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ২২ বেল। যা গত বারের তুলনায় ৩৯ হাজার ৮২২ বেল বেশি।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা জমি থেকে পাট কেটে ফেলেছে। পাট পানিতে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করে ফেলেছে। এখন চলছে পাট কাঠি শুকানোর কাজ। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে পাটকাঠি সারি সারি রেখে দিয়েছে অনেকই। পাট কাঠি শুকানো শেষ হলে অনেক কৃষক বাড়ির আঙিনায় স্তূপ করে রেখে দিচ্ছে। অনেকেই আবার বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব পাট কাঠি পানের বরজ, ক্ষেতের চারপাশে বেড়া দেওয়া, গরুর ঘর, রান্না ঘরে বেড়া দেওয়া, জ্বালানিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আকমল হোসেন বলেন, এবছর পাট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ছিলাম। পানির অভাবে পাট কাটতে পারছিলাম না। এলাকার একজনের পুকুরে জমির পাট জাগ দিয়েছিলাম। অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং ভালো আসে নাই। তারপরও ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছি। এখন পাট কাঠি শুকানোর কাজ করছি। কিছু পাট কাঠি নিজের প্রয়োজনের জন্য বাড়িতে সংরক্ষণ করে রেখেছি। বাকি পাটকাঠি বিক্রি করে দিয়েছি। ১০০ মুঠা পাটকাঠি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরেক কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, পাটে মোটামুটি ভালো দাম পেয়েছি। এখন পাটকাঠি বিক্রি করেও ভালো দাম পাচ্ছি। পাটকাঠি হলো কৃষকদের জন্য বাড়তি লাভ। এক আটি পাটকাঠি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে পারছি।
সদর উপজেলার চন্দনী এলাকার কৃষক মোস্তফা শেখ বলেন, এক সময় পাটকাঠি ঘরের বেড়া, পানের বরোজ আর জ¦ালানি ছাড়া ব্যবহার করা হতো না। কিন্তু বর্তমানে পাট কাঠির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভেজা পাটকাঠি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং শুকনা পাটকাঠি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকাতেও বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম. শহীদ নূর আকবর বলেন, পাট এবং পাট কাঠির ভালো দাম পাওয়ার কারণে প্রতি বছরই এই জেলায় পাটের আবাদ বাড়ছে। এবছর পাটে বাম্পার ফলন পেয়েছে কৃষকেরা। এবার বৃষ্টি না থাকায় পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা ভোগান্তিতে ছিলো। পাটের দাম ভাল পেয়ে খুশি চাষিরা। সেই সঙ্গে পাট কাঠি বিক্রি করে বাড়তি লাভ করছে চাষিরা।