শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
শ্রীপুরে রানাহত্যায় লাশ নিয়ে বিক্ষোভ
গাজীপরের শ্রীপুরে চাঞ্চল্যকর রানা হত্যাকান্ডে এলাকাবাসী ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত আটটারদিকে উপজেলার মাওনা-ধনুয়া আঞ্চলিক সড়কে তারা মানববন্ধন করে।
স্থানীয়রা জানান, চুরির অপবাদে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে রানাকে হত্যা করা হয়। এলাকাবাসী রানার খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী করেন ।
এর আগে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে খুনিরা রানাকে ডেকে নিয়ে রাত ভর নির্যাতন করে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দিনভর বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটাছুটি করে। রাত আটটারদিকে রানা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মামলার অভিযুক্তরা হলো উপজেলার কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে ঘাতক শিপন (২৭) , আকাশ (২৫), একই গ্রামের মৃত খোকা মেকারের ছেলে উজ্জল (৪৫), সিরাজুল ইসলামের ছেলে শওকত (৩০), আবুল কাশেমের ছেলে ইমন (৩০), মৃত ওদর আলী বাইদ্যার ছেলে মোশারফ (৫০) সহ অজ্ঞাত ৪/৫জন। নিহত রানা উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সহজ সরল রানা বাবা-মার একমাত্র ছেলে। হত্যাকান্ডের মূল হোতা শিপন শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। পরে শিপন বাড়ি ফেরেনি। শিপন বাহিনীর ভয়ে কেউ রানাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার দিকে রানার বাবা-মা জানতে পায় রানা অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন সে শিপনের ভাঙ্গারী দোকানের সামনে সড়কে অচেতন পড়ে আছে। রানার বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে চাইলে শিপন বাহিনী বাধা দেয়। প্রায় তিনঘন্টা তাদের আটকে রাখা হয়। শিপনের নেতৃত্বে খুনিরা বাবা-মার সামনে রানাকে মারপিট করে। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারপিট করে শিপন বাহিনী। চুল ছিড়ে ফেলে রানার মায়ের। জোর পূর্বক একাধিক সাদা কাগজে টিপসই নেওয়া হয়। এসময় শিপন বলে, সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছি। এখন যা পারস করগা। মানববন্ধনে এসে রানার বাবা আমিনুল ইসলাম, মা রেহেনা বেগম, স্থানীয় আজিম উদ্দিন, শুক্কুর আলী, আসাদুজ্জামান, বাচ্চু সরকার ও তরিকুল ইসলাম রিপনসহ স্থানীয়রা ঘাতকদের নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
তারা বলেন, ঘাতকরা রানার মুখে কাগজ ঢুকিয়ে দেয়। শরিরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক শক দেয়। পুরুষাঙ্গে ঢুকিয়ে দেয় রড। ড্রিল মেশিন দিয়ে পা ছিদ্র করে ফেলে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বুকের পাজরের হাড়, হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। সকালে অচেতন রানা কে ঘাতকরা ফেলে রাখে শিপনের দোকানের সামনে রাস্তায়। সন্তানের নির্মম নির্যাতনের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন রানার বাবা-মা।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ভাঙ্গারী ব্যবসার আড়ালে শিপন বাহিনী এলাকায় চুরি ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। গ্রামবাসীরা দ্রুত রানার খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।