রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
বিশ্ব পর্যটন দিবস : অমর প্রেমগাথার স্মারক সখিনা বিবির সমাধি
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের কেল্লাতাজপুর কুমড়ি গ্রামে রয়েছে ‘বীরাঙ্গনা সখিনা বিবি’র সমাধি। সখিনা বিবির অমর প্রেম আর বীরগাথার কথা এখনো এলাকার লোকজনের মুখে মুখে ফেরে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ঐতিহাসিক এই সমাধিস্থল দেখতে ভিড় করেন। কিন্তু আবাসন ব্যবস্থা না থাকা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দরকারি অবকাঠামো না থাকায় তাদের সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরতে হয়। ফলে অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে সখিনা বিবির সমাধি ঘিরে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের কেল্লাতাজপুর গ্রামটি মুঘল শাসনামলের স্মৃতিবিজড়িত। সপ্তদশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলের মুঘল শাসনকর্তা ছিলেন দেওয়ান ওমর খাঁ। তারই রূপবতী কন্যা সখিনা। অদূরে কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির বারো ভূঁইয়া ঈশা খাঁর দৌহিত্র ফিরোজ খাঁ। সখিনার রূপগুণের কথা শুনে ফিরোজ এবং অপরদিকে ফিরোজের বীরত্বের শোনে সখিনা দুজন দুজনকে না দেখেই প্রেমে পড়ে যান। সখিনাকে বিয়ে করার জন্য ওমর খাঁর দরবারে প্রস্তাব পাঠান ফিরোজ। বারো ভূঁইয়ারা মুঘলদের শত্রু হওয়ায় বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অপমানের প্রতিশোধ নিতে ফিরোজ খাঁ কেল্লাতাজপুর আক্রমণ করে সখিনাকে তুলে এনে বিয়ে করেন। প্রতিশোধ নিতে ওমর খাঁ জঙ্গলবাড়ি আক্রমণ করে ফিরোজ খাঁকে বন্দি করেন। স্বামীকে উদ্ধার করতে বাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন পুুরুষবেশে সখিনা। এরমধ্যে কূটকৌশল করেন ওমর খাঁ। যুদ্ধের ময়দানে খবর রটান জেলে বসে ফিরোজ খাঁ সখিনাকে তালাক দিয়েছেন। ফিরোজের মোহরযুক্ত মিথ্যা তালাকনামা দেখে সখিনার হাত থেকে পড়ে যায় তলোয়ার। ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যান তিনি। কুমড়ি গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। তখন থেকেই প্রেম ও বীরত্বের জন্য সখিনার নামের পাশে উপাধি হয় বীরাঙ্গনা। ধীরে ধীরে এ সমাধি হয়ে উঠে প্রেমিক-প্রেমিকাদের তীর্থস্থান।
একসময় সখিনা বিবির সমাধি উন্মুক্ত থাকলেও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সীমানাপ্রাচীর ও ফটক নির্মাণ করা হয়। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ২০১২ সালে ‘বীরাঙ্গনা সখিনা সিলভার পেন অ্যাওয়ার্ড’ চালু করেন স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান।
মাওহা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আল ফারুক বলেন, সখিনা বিবির সমাধি পর্যটনের অপার সম্ভাবনার জায়গা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সখিনা বিবির সমাধিস্থল পরিদর্শনে এসে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী একেএম খালিদ বাবু বলেন, ‘সরকার এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।’
গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘সখিনা বিবির সমাধিস্থলে পরিদর্শনে আসা পর্যটকদের থাকার ভালো কোনো সুবিধা নেই। পর্যটকরা এসে বিশ্রাম নিতে পারেন না। শৌচাগার নেই। পর্যটন স্পট করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে।’
ইউএনও হাসান মারুফ বলেন, ‘সখিনা বিবির সমাধি ঘিরে পর্যটনকেন্দ্রের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাই। এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, সে চেষ্টা করছি।’