মিজান রহমান

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বাড়ানো হচ্ছে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা

কৃষি-অর্থনীতিতে নবযুগ আনবে মাশরুম চাষ 

ফাইল ছবি

মাশরুম চাষকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে চায় সরকার। সেজন্য মাশরুম চাষ উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দেশে ও বিদেশে মাশরুমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি অর্থনীতিতে নবযুগের সূচনা করবে এই মাশরুম চাষ।

জানা গেছে, মাশরুম চাষে প্রশিক্ষণ বিপণন বাড়াতে ৯৮ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মাশরুমের ২৫টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে চাষ ও সংরক্ষণ উপযোগী টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন এবং ৮০০ মাশরুম-শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার টন মাশরুম প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণন সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ প্রায় সব দেশই মাশরুম আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। মাশরুম চাষ করার জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। ঘনবসতিপূর্ণ ও দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাবারের চাহিদা বাড়ছে অথচ খাবার জোগান দেওয়ার জমি প্রতি বছর কমছে। এ অবস্থায়, অনুৎপাদনশীল ফেলনা জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। এ পর্যন্ত মাশরুমের ১৬২টি জাত দেশে এনেছে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। দেশে চাষের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের পাহাড়ি ও বনাঞ্চল থেকেও ১৪০টি জাত সংগ্রহ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৯৮ কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে “মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ” শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি আগামী ২০২৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার যেসব উপজেলায় মাশরুম চাষের সম্ভাবনা রয়েছে এমন ১৬০টি উপজেলা ও ১৫টি মেট্রোপলিটন থানা এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প গ্রহণের তিন উদ্দেশ্য হলো- (১) বিভিন্ন ধরনের মাশরুমের ২৫টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে চাষ ও সংরক্ষণ উপযোগী ২০টি টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, (২) উচ্চ মানসম্পন্ন মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ ও (৩) ৮০০ জন মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়ানো।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৯৫টি ছাদ প্রদর্শনী করা হবে। ৮০০টি স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। ৬০০ বর্গমিটার ডরমিটরি ভবন এক্সটেনশন করা হবে। ৪৫০ বর্গমিটার ল্যাবরেটরি কাম অফিস ভবন এক্সটেনশন নির্মাণ করা হবে। ৯৫০ বর্গমিটার ওয়ার্কশপ কাম ল্যাবরেটরি ভবন, ১টি ইনকিউবেশন রুম (উপকরণসহ) নির্মাণ করা হবে। ৩৫টি ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিট নির্মাণ এবং ৫০০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। ২৭ ব্যাচ উদ্যোক্তা, ৮০০ ব্যাচ দলভুক্ত চাষি, ১০০ ব্যাচ ছাদ বাগানি বা সাধারণ চাষি, ৮০০ ব্যাচ রিফ্রেশার, ২৯ ব্যাচ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) ও উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা (এসএএইচও), ৭ ব্যাচ প্রশিক্ষক, ৯ ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তা, ৬ ব্যাচ জিও-এনজিও কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১৬০টি মাঠ দিবস, ৫টি মাশরুম মেলা ও ১৪ ব্যাচ উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রকল্পটির মাধ্যমে পুষ্টিকর, নিরাপদ ও উচ্চফলনশীল মাশরুমের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে এবং মাশরুমের উৎপাদনশীলতা বাড়বে, যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্ণিত শস্য উপখাতের উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদন উপকরণের দক্ষ ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্পটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২ এ বর্ণিত টেকসই কৃষির প্রসার এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৩ এ বর্ণিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে মনে করে কমিশন।

একনেকে উপস্থাপনের প্রস্তাবনায় পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে উন্নত জাতের মাশরুমের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। দেশে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদিত মাশরুম বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, সারা দেশের যেসব স্থানে সম্ভাবনা রয়েছে সেসব এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্য দিয়ে মাশরুমের ব্যবহার বাড়বে। মানুষের পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে নতুন প্রকল্প গ্রহণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, দেশে মাশরুম চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এরই মধ্যে মাশরুমের উন্নত জাত ও চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। এখন দেশে দ্রুততার সঙ্গে কৃষক ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাশরুম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close