কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কক্সবাজারে নকশাবহির্ভূত স্থাপনা, হরদম দুর্ঘটনা

কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে নকশা বহির্ভূত স্থাপনা। ছবি বৃহস্পতিবার তোলা -প্রতিদিনের সংবাদ 

কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে নকশা বর্হিভূত বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির অভিযোগ উঠেছে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই স্থানে এরই মধ্যে অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে গাড়ির বাস কাউন্টার, দুটি স্টিলের সিঁড়ি, রেস্টুরেন্ট, অফিস, ড্রাইভওয়েতে দোকান নির্মাণসহ অনেক স্থাপনা। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে নকশায় দেখানো পুরো গাড়ি পার্কিয়ের জায়গা নেই বললেই চলে। ফলে এই বহুতল ভবনসংশ্লিষ্ট অসংখ্য যানবাহন বর্তমানে পার্কিং হচ্ছে প্রধান সড়কে। এতে করে একদিকে যেমন পর্যটন শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। পাশাপাশি ওই স্থানে হরদম লেগে রয়েছে দুর্ঘটনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিষয়টি লক্ষ্য করতে পেরে এবং পর্যটকসহ স্থানীয়দের সুবিধার কথা চিন্তা করে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের নকশা বহির্ভূত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) পক্ষ থেকে গত ২১ অক্টোবর ২০২১ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ‘অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিস’ দেওয়া হয় ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের হাজি দেলোয়ার হোসেন ও মঞ্জুর আলমকে। নোটিসে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার ৭টি বিষয় উল্লেখ করেন যা হলো- যথাক্রমে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের অনুমতিপত্রে বাণিজ্যিক ও নকশায় আবাসিক উল্লেখ আছে যা সাংঘর্ষিক, ড্রাইভারদের জন্য ওয়েটিং রুম ও টয়লেট নকশায় দেখানো হলেও বাস্তবে তা নেই, বাইরের দিকে দুটি স্টিলের সিঁড়ি থাকলেও নকশায় এর কোনো অস্তিত্ব নেই, সিঁড়ি ও লিফটের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে, নকশায় যেখানে রেস্তোরাঁ এবং শপ দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে নেই, তাছাড়া রিসোর্টের নিচতলায় দুটি অফিস থাকলেও নকশায় এর কোনো অস্তিত্ব নেই, নকশায় যেখানে ড্রাইভওয়ে ও পার্কিং দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে রয়েছে দোকান।

এরপর গত ০৪/১১/২০২১ তারিখ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একই অথরাইজড অফিসার রিসাদ উন নবী স্বাক্ষরিত একটি চূড়ান্ত নোটিস দেওয়া হয় ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। সে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল ৭ (সাত) দিনের মধ্যে নকশায় ব্যত্যয়/ব্যতিক্রম অংশ ভেঙে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় কউকের পক্ষ থেকে তা অপসারণ করা হবে। এরপর গত ১৫/১১/২০২১ তারিখ ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজি দেলোয়ার হোসেন সে নোটিসের জবাব দেন। সেখানে তিনি কউক কর্তৃক নকশা বহির্ভূত সব ধরনের স্থাপনা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে উচ্ছেদে সহযোগিতার আশ্বাসের কথা বলেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাস পার হলেও রহস্যজনক কারণে সেখানে উচ্ছেদের আঁচড় লাগেনি। বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের নকশাবহির্ভূত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। বরঞ্চ বর্তমানে সব অবৈধ স্থাপনার পাশাপাশি আরো একটি নতুন করে রেস্টুরেন্ট তৈরির কাজ চলছে। সূত্র জানায়, অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিস ও সর্বশেষ উচ্ছেদের জন্য চূড়ান্ত নোটিস দেওয়ার পর সেখানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী অথরাইজড অফিসার নাছির উদ্দিন কয়েকবার পরিদর্শনে যান। সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তার মোটা অঙ্কের বাণিজ্য হয় বলে অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়দের দাবি, যদি নোটিস দাতারা ম্যানেজ না হন তাহলে মালিকপক্ষ ও হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার হোসেন উচ্ছেদের পক্ষে থাকার পরও কেন এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না। তাদের মতে, বিশেষ করে গ্রিন লাইন বাস কাউন্টার ও হোটেল পউষীর মালিকের কাছ থেকে নোটিশ দাতার পক্ষে নাছির উদিন মোটা অঙ্কে ম্যানেজ হয়েছেন। যে কারণে চূড়ান্ত নোটিস দেওয়ার পরও কোনো ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী অথরাইজড অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, নোটিস দেওয়া হলেও এটি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সঙ্গে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কি সম্পর্ক বা উচ্ছেদ করার ক্ষমতা না থাকলে কয়েক দফায় নোটিস দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। তবে এক পক্ষের কাছে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এর প্রমাণ কেউই দিতে পারবে না।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ রিসাদ উন নবী বলেন, আমি অথরাইজড অফিসার হিসেবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। যে কারণে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের দুজনকে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার জন্য নোটিস দিয়েছি। তবে উচ্ছেদ কিংবা মোবাইল কোর্ট করার এখতিয়ার আমার নেই। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচিব স্যার ও চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে আলাপ করব। যেন দ্রুত সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায়। ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২১ অক্টোবর ২০২১ ও ৪ নভেম্বর ২০২১ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার রিসাদ উন নবী স্বাক্ষরিত দুটি নোটিস দেওয়া হয় আমাকে। প্রথমটি ‘অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিস’ দ্বিতীয়টি উচ্ছেদের জন্য চূড়ান্ত নোটিস। আমি দুই নোটিসের জবাব দিয়েছি। পাশাপাশি উচ্ছেদকে স্বাগতম জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও কেন তারা উচ্ছেদ করছে না তা আমি অবগত নই। তিনি আরো বলেন, আমি সর্বদাই আইনের পক্ষে এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ জানান, ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টটি কউক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকে রয়েছে। কউকের যাত্রা শুরুর পর অভিযোগের ভিত্তিতে সে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে নোটিস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকার কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে নতুন করে যেসব স্থাপনা হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি ওই বিষয় নিয়ে যদি কোনো কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নকশা বহির্ভূত স্থাপনা,কক্সবাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close