আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘আব্বার মুখটা একবার দেহান’ প্রবাসী বাবার লাশ আনার আকুতি 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

‘আমার আব্বারে আইন্না দেন, আব্বার মুখটা আমারে একবার দেহান, আমার আব্বা সৌদি গেছেন। গত মাসেও টাহা পাডাইছে। আব্বার সাথে প্রত্যেক দিন কতা না কইলে আমার রাইতে ঘুম অয় না,’ এভাবেই আহাজারি করে বুক ভাসাচ্ছেন কাউনিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আউয়াল হাওলাদারের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মো. আরিফ এবং চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মরিয়া। তাদের পাশে নির্বাক আছে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী কারিমা।

আরিফ বলে ‘আমার আব্বা মরে নাই। যদি মইরা যাইত তাইলে আব্বার লাশ বাড়িত আনতে এত দেরি লাগে ক্যা? আমনেরা সবাই আমার লগে মিচা কতা কইতাছেন ক্যা? আমারে কান্দাইয়া আমনেগো লাভ কী?’

যেকোনো মানুষ দেখলে এভাবেই আহাজারি শুরু করছে সৌদি আরবে স্টোক করে মারা যাওয়া আউয়ালের অবুঝ শিশুরা।

সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে জীবিকার সন্ধানে এক বছর আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কাউনিয়া গ্রামের খোরশেদ হাওলাদারের ছেলে আউয়াল হাওলাদার (৩৫)। সেখানে কাজও শুরু করেছিলেন। ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান আউয়াল। লাশ এখনো সৌদি আরবে। টাকার অভাবে দেশে আনতে পারছে না পরিবার।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আউয়াল হাওলাদার (৩৫) দীর্ঘদিন ধরে বেকার ছিলেন। ২০২১ সালের ২১ আগস্ট কৃষি ব্যাংকের কাছে জমি বন্ধক রেখে ও এনজিও’র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করেন। বাড়িতে কিছু টাকা পয়সাও পাঠাতে থাকেন। সম্প্রতি ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আউয়াল হাওলাদার। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। ২ মেয়ে ১ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর ছবি নিয়ে কেঁেদ কেঁদে দিনাতিপাত করছেন নিহত আউয়ালের স্ত্রী খাদিজা খাতুন (৩০)।

আউয়ালের পিতা খোরশেদ হাওলাদার বলেন, এক বছর আগে আউয়ালকে বিদেশে পাঠাই। কিন্তু বছর না যেতেই আমার ছেলে স্টোক করে মারা গেল। এখন আমি শুধু ছেলের লাশ চাই। যেন মসজিদের পাশে কবর দিতে পারি।

তিনি আরো বলেন, ‘ছেলের লাশটা পাইলেও কিছুটা সান্ত¦না পাইতাম। বিদেশ থেকে ছেলের লাশটারে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাই।’

আউয়ালের লাশ সৌদি আরবের আল কাসিম জেলার গুরাইদার মারগাজী হাসপাতালে রয়েছে। আউয়াল সৌদি গিয়ে ফ্রি ভিসায় কাজ করতেন। যে দিন আউয়াল মারা যান সে দিন সৌদি নাগরিক সলেমান দাখাইনের অধীনে কাজ করছিল। কিন্তু আউয়ালের নিয়োগদাতা নন। তাই সলেমান দাখাইন লাশ হাসপাতালে রেখে দিয়েছেন।

আউয়ালের পরিবার সৌদি আরবে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয় লাশ আনতে হলে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। নতুবা লাশ পাঠাতে পারবে না। অসহায় দরিদ্র এ পরিবারের পক্ষে যা সম্ভব নয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এর আগে সবকিছু বিক্রয় করে, ধার দেনা করে বিদেশ গিয়েছিলেন আউয়াল। সেই ধারদেনাই পরিশোধ করা হয়নি। কীভাবে এত টাকা জোগাড় করবে। কোথায় পাবে এত টাকা। বাবার লাশ কখন আসবে পথে দিকে চেয়ে আছেন আউয়ালের অবুঝ শিশুরা।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিঃদায়িত্বে) এস এম সাদিক তানভীর বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারটিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আউয়ালের লাশ দেশে আনার জন্য তার পরিবার প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমতলী,প্রবাসী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close