কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সন্তান প্রসব করেই পরীক্ষায় হলে গেলেন মা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

কুষ্টিয়ায় সন্তান জন্ম দেওয়ার দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষার হলে গিয়ে দিয়েছেন এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। সুস্থ আছেন ওই শিক্ষার্থী মা ও তার সন্তান। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে। আর এই ঘটনা গোটা জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মিলপাড়া এলাকায় কুষ্টিয়া পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নগর মাতৃসদন হাসপাতালে প্রসব বেদনা নিয়ে আসেন মিলপাড়া এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেঘলা খাতুন। ভোরের দিকে ভর্তি হলেও ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তান ভুমিষ্ট হয় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে। কিন্তু পরীক্ষা যে সকাল ১১টায়। কীভাবে পরীক্ষা দেবেন এ নিয়ে পড়েন সংশয়ে। স্বাভাবিক সন্তান প্রসব হওয়ায় সুস্থও অনুভব করেন মেঘলা খাতুন। তাই বলে পরীক্ষা দেবেন এমনটি ভাবাই যেন বোকামি।

অবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালো, মেঘলা পরীক্ষা দেবে। পরীক্ষা দেওয়ার মতো সুস্থও আছেন। সুস্থ আছে সদ্য ভূমিষ্ট শিশুটিও। প্রবল আগ্রহ নিয়ে মেঘলা খাতুন আকুতি জানান, তিনি পরীক্ষায় অংশ নিবেন।

নগর মাতৃসদন হাসপাতালের প্রজেক্ট ম্যানেজার রাহেলা পারভীন আশ্বস্ত করলেন, পরীক্ষা দিবেন মেঘলা খাতুন। তাই প্রস্তুত করলেন অ্যাম্বুলেন্স, সঙ্গে নার্সসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিলেন। পরীক্ষা কেন্দ্র হাসপাতাল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া হাইস্কুল। যথারিতি পরীক্ষার ঠিক ১৫ মিনিট আগেই হাজির অ্যাম্বুলেন্স। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত সবাই অ্যাম্বুলেন্সের কাছে এসে হাজির। স্ট্রেচারে করে নেওয়া হলো পরীক্ষার হলে। পরীক্ষাও দিয়েছেন ওই ছাত্রী। পরীক্ষা শেষে আবারও হাসপাতালে যান তিনি।

এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকেরা জানান, পরীক্ষা ভালোভাবেই দিতে পেরেছেন মেঘলা খাতুন। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। তবে তারা আশ্চর্য হয়েছেন। একজন নারী কীভাবে সন্তান প্রসব করেই সুস্থভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।

নগর মাতৃসদনের প্রজেক্ট ম্যানেজার রাহেলা পারভীন জানান, নগর মাতৃসদন সব সময়ই প্রসূতি মায়েদের কল্যাণে কাজ করে। একজন নারী সন্তান প্রসবের পর থেকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ওই নারী সন্তান প্রসবের মাত্র দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে পেরে পুলকিত মনে হয়েছে তার কাছে। শুধু এই নারীই নয়, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সব প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাও এভাবেই হয়ে থাকে।

কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমাইয়া সারমিন বন্যা জানান, মেঘলা খাতুন শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন কীনা তা পরীক্ষা করেই তাকে পরীক্ষার হলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ‘নগর মাতৃসদন প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসায় এক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করা হয়। মেঘলা খাতুন নামে যে মেয়েটি সন্তান প্রসবের মাত্র দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন এজন্য অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে চাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তাদের সুচিকিৎসায় মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছেন।’

মেঘলা খাতুন জানান, আমি খুব চিন্তিত ছিলাম আমার হয়তো পরীক্ষা দেওয়া হবে না। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যার কারণে আমি পরীক্ষা দিতে পেরেছি। পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলেও জানান মেঘলা খাতুন।

স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালের ১৫ মার্চ মেঘলা খাতুনের বিয়ে হয়। তার স্বামী আল আমীন একটি কারখানায় কাজ করেন। মেঘলা খাতুন আলাউদ্দিন আহমেদ ক্যাডেট স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের চর মিলপাড়া এলাকার গড়াই আবাসনে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সন্তান প্রসব,পরীক্ষায় হল,মা,কুষ্টিয়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close