মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর)

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হাজীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে কোন্দা 

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের চতন্তর গ্রামে এখনো তৈরি করা হচ্ছে, বিলুপ্তি প্রায় তাল গাছের কোন্দা (নৌকা)।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে কোন্দা। যা তাল গাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। স্থানীয় ভাষায় কোন্দা বলা হলেও, এটা ডোঙ্গা নামেও পরিচিত। কোন্দা নৌকার মত বিশেষভাবে তৈরি বাহন। তবে শুধু একজন, বড় জোর দুইজন যাতায়াত করতে পারেন। এক সময় উপজেলার সর্বত্র চোখে পড়তো এই কোন্দা। খাল বিল জলাশয় এমনকি নদীতেও গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম বাহন ছিল। সাধারণত দুইএক জনের পারাপার, মাছ ধরা, ধান কাটা, শাপলা তোলা, শামুক সংগ্রহ, বিল ও পুকুরের মাছের ঘেরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো কোন্দা।

কোন্দা অনেকের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমও ছিল। এছাড়াও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ খেলায়ও কোন্দার ব্যবহার হতো। গ্রামে কোন্দা বাইচের আয়োজন হত।

গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি, খাল বিল জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আর কোন্দার দরকার হয় না। তাছাড়া এখন আর আগের মত ওত তালগাছও নাই।

স্থানীয়রা জানান, মাত্র দুই/তিন দশক আগেও কোন্দার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিলে ও গ্রামের নিন্মাঞ্চলে পানি থাকতো সারা বছর। লোকজন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজসহ বাড়ি থেকে হাট বাজার এবং বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতেন কোন্দা দিয়ে। এর অন্যতম কারণ ছিল, তালের কোন্দা বেশ টেকসহ ও মজবুত। যদিও খুব বেশি মানুষ বা মালামাল বহন করা যেতো না। তবে ছোটখাট বাজার ঘাট ও পারিবারিক কাজে নিত্য ব্যবহার হতো কোন্দা।

কিন্তু এখন এর ব্যবহার না থাকায় কোন্দা তৈরির কারিগররা তাদের পেশা পরিবর্তন করে নিয়েছেন। অনেক কারিগর তাদের পৈত্রিক এই ব্যবসা ধরে রাখার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো কিছু কোন্দা তারা তৈরি করছেন।

জানা গেছে, উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের চতন্তর গ্রামে অর্ধশতাধিক পরিবারের পৈত্রিক পেশা ছিল কোন্দা তৈরি। সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, এখনো সেখানে কিছু কিছু কোন্দা তৈরি হয়। এ সময় কয়েকজন কারিগর জানান, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, তাল গাছ না পাওয়া, কোন্দার দাম বৃদ্ধি, পরিশ্রমের তুলনায় মুজুরী কম হওয়ায় আগের মত আর কোন্দা তৈরি হয় না। এর প্রচলনও শেষ হয়ে যাচ্ছে।

‘আগে খাল-বিলে নিয়মিত পানি থাকায় সারা বছর কোন্দা তৈরি হত। এখন শুধু বর্ষায় তৈরি করা হয়। আর কোন্দা তৈরির উপযোগি একটি তাল গাছ কিনতে ১০ হাজার টাকা লাগে। সেই গাছ কেটে আনতে আরো ৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এরপর দুইজন কারিগরের প্রায় এক সপ্তাহের পরিশ্রমে একটি কোন্দা তৈরি হয়। অথচ একটি কোন্দা ১২-১৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না।

কারিগর আব্দুল হামিদ বলেন, এখন আর কোন্দা তৈরিতে লাভ নাই। পৈত্রিক ব্যবসা ছিল। যা বাপ-দাদার কাছ থেকে শিখেছি। যার মায়ার কারণে এবং এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই পেশায় পড়ে আছি।

রাজারগাঁও থেকে আসা রফিক নামের একজন ক্রেতা জানান, ছোট বেলায় সাড়ে ৩ হাজার কিংবা ৪ হাজার টাকায় একটি তালের নৌকা নিলে তা ১০/১২ বছরে নষ্ট হতো না।

এ বিষয়ে বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন বলেন, আমার ইউনিয়নে তাল গাছের নৌকা তৈরির বেশ কয়েকজন পরিবার রয়েছে। এরা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তালের নৌকা তৈরি করে এই পেশাকে ধরে রেখেছেন। আসছে বছর এই পরিবারগুলোকে পরিষদ থেকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কোন্দা,হাজীগঞ্জ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close