এম এ মাসুদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সুন্দরগঞ্জে শ্রমের মজুরি পঞ্চাশ টাকা

ছবি : সংগৃহীত

অভাব মানুষের নিত্য সঙ্গী। সেই অভাব মোচনের জন্য চালায় প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, খোঁজে কর্মসংস্থান। আর বেকারত্ব ও অভাবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্র নারীদের দিয়ে মাত্র ৫০ টাকা দৈনিক মজুরিতে সাড়ে ৬ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নিচ্ছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হেয়ার ফ্যাশন নামে কয়েকটি পরচুলা তৈরির কারখানার মালিক।

জানা গেছে, ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীদের নিকট থেকে কিছু পণ্যের বিনিময়ে তাদের চুল সংগ্রহ করা হয়, যা হেয়ার ফ্যাশন নামের গড়ে ওঠা এসব কারখানায় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরচুলা তৈরী হয়ে তা ঢাকায় পাঠানো হয়।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বাছোহাটি গ্রামের প্রবাসী আজিজুল হকের দেওয়া ভাড়া বাসায় চলছে ওই পরচুলা তৈরির কারখানাটি। যেখানে কাজ করছেন রিনা (২২) ও রামগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনীসহ ১০-১২ জন। তারা বলছেন, সকাল ৭টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অগোছালো চুলগুলো গোছানোর কাজ করতে হয়। বিনিময়ে দৈনিক ৫০ টাকা হিসেবে মাসে ১ হাজার ৫শ টাকা পাই। আর দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে ৫০ টাকা দিয়ে কী খরচ হতে পারে তা এই প্রতিবেদককেই অনুমান করতে বললেন ওই নারী শ্রমিকরা। কখনো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে চলে যেতে চাইলে মালিক আরো একটু অগোছালো চুল এনে দেন তা গোছানোর জন্য- এমনটিও জানিয়েছেন তারা।

সেখানেই কথা হয়, এম এন্ড এন হেয়ার ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের

কুতুবপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে বিপ্লব হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমার কারখানার সংখ্যা ৯টি এবং নারী শ্রমিক রয়েছে ৭০-৮০ জন। সকাল ৭টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কাজ করেন তারা। প্রত্যেক শ্রমিককে হাজিরার জন্য কার্ড দেওয়া আছে। দৈনিক ৫০ টাকা হিসেবে মাসে ১ হাজার ৫শ টাকা বেতন দেওয়া হয় তাদের।

সাড়ে ৬ ঘণ্টা কাজ করে মাত্র ৫০ টাকা মজুরি কম হয়ে যায় না? জবাবে একটু ইতস্তত বোধ করেন বিপ্লব।

ঢাকায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত চুলের গোছা দেখিয়ে বলেন, আমার কারখানায় আমিসহ ৪ জন কাজ করি। আমি বেতন পাই ২০ হাজার টাকা, আলী হোসেন, ৬ হাজার, জাহিদ ১২ হাজার এবং নাঈম পায় ৮ হাজার টাকা।

মালিক ও তার পুরুষ কর্মচারীদের বেতন এবং নারী শ্রমিকদের মাসিক মজুরির আসমান-জমিন পার্থক্যই বলে দেয় যে- নারী ও পুরুষের মজুরি বৈষম্য কতটা প্রকট! স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন ওই নারী শ্রমিকরা।

এছাড়া, উপজেলার পিনুর মোড়, থেলথেলার বাজারেও রয়েছে আরো কয়েকটি এমন হেয়ার ফ্যাশন। পিনুর মোড়ে রয়েছে- মাগুড়ার শালিখা থানার আল-আমিনের আল-আমিন হেয়ার ফ্যাশন নামে কারখানা রয়েছে ৭-৮টি। সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা ৯০-১০০ জন। লিটনের রয়েছে ছুরাইয়া হেয়ার ফ্যাশন নামে ৫-৬টি কারখানা এবং শ্রমিক রয়েছে ৫০-৬০ জন। থেলথেলার বাজারে মেহেরপুরের আজগার মোল্লার এবং জাহাঙ্গীর ও সাজ্জাদ হোসেনের কারখানা রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে।

উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাফর আহমেদ লস্করের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সুন্দরগঞ্জ,গাইবান্ধা,ফেরিওয়ালা,পরচুলা,শ্রমিক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close