মাহমুদুল হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বহু প্রতীক্ষার জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বহু প্রতীক্ষা আর লোকসানের পর রাঙ্গাবালীর আশাহত জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ। এতে হাসি ফুটেছে জেলে, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের মুখে, স্বস্তি ফিরেছে তাদের পরিবারে। ধারদেন পরিশোধ করে কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন তারা। সরগরম হয়ে উঠেছে মাছের আড়তগুলো। তাদের ভাগ্য যেন ফের সুপ্রসন্ন।

দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকাল শেষেও নদী ও সাগরে মিলছিল না আশানুরূপ সংখ্যক ইলিশ। এতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জেলেরা। অন্যদিকে, হঠাৎ তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইলিশ শিকারে গিয়ে লোকসান গুনতে হতো। এই লোকসানের মধ্যে এনজিওর ঋণের টাকা আর কিস্তি পরিশোধের ভয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করে চলে গেছেন ঢাকার শহরে।

অবশেষে প্রতীক্ষার পর নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রূপালি ইলিশ। গভীর সাগরের ট্রলারের জেলেরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের ৫০-৬০ বাম্প পানিতে গিয়ে জাল ফেলতেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। মাছের হাট-বাজার এখন সরগরম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা ট্রলারে করে মাছ নিয়ে আসছেন জাহাজমারা স্লুইসগেট ঘাটে, নিচকাটা স্লুইসগেট ঘাটে, চরমোন্তাজ স্লুইসগেট ঘাটে, ছোটবাইশদিয়া কোরালিয়া স্লুইসগেট ঘাটে, বাইলাবুনিয়ার নদীর পার ঘাটে।

দেখা গেছে, ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশ ৯৫০-১০০০ টাকায়, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭৫০-৮০০ টাকায়, ৬০০ গ্রাম ওজনের ৬০০-৬৫০ টাকায়, ৫০০ গ্রাম ওজনের ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

জেলেরা জানান, চলতি বছরে সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা সরকারি নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। ওই সময়টা জেলেরা কর্মহীন ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগরে নামলেও জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। তবে কিছুদিন ধরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।

জেলে শিপন শিকদার জানান, ছোট নৌকায় মাছ ধরি আমরা। গত এক সপ্তাহে মাছ বিক্রি করে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। ওই ঘাটের অনেকেই জানান, এখন তারা প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করছেন, অল্প কয় দিনে বিগত দিনের দেনা পরিশোধ করে কিছু টাকা জমাও করেছেন, এ যেন আল্লাহর দান।

তিনি আরো বলেন, মৌসুমের শুরুতে সপ্তাহে ২০০০-৩০০০ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারিনি। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হতো। বর্তমানে মাছ বিক্রি করে সংসার পরিচালনা, দেনা পরিশোধ করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছি। আল্লাহ এবার জেলেদের জন্য একটি দান দিয়েছেন। সামনের বছরটা জেলেদের ভালোভাবে কাটবে।

মৌডুবী জাহাজমারা স্লুইসগেট জেলে সভাপতি মাহাতাব হাওলাদার বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে জেলেরা মাছের কোনো দেখা পাইনি। এতে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আশা ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ঋণের জালে আটকা পড়েছি। জালে ইলিশ না পেয়ে অনেক জেলে দেনার চাপে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, দেখেন আল্লাহর কি রহমত! এই এক সপ্তাহ ধরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। যারা এখনো জেলে পেশায় আছেন তারা এই এক সপ্তাহে মাছ ধরে পেছনের ধার দেনা পরিশোধ করতে পারছেন। আশা করি এভাবে জেলেদের জালে মাছ ধরা পরলে ইনশাআল্লাহ সামনের নিষেধাজ্ঞার আগে সবাই অনেক টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরবে।

মৎস্য ব্যবসায়ী খোকন ভূইয়া জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সাগরে গিয়ে মাছ না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। সেই সঙ্গে আমরাও চিন্তিত ছিলাম। এখন জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছ পেয়ে তারাও খুশি জেলেরা মাছ বিক্রি করে ধার দেনা দিয়ে কিছু সঞ্চয় করছে। সেই সঙ্গে আমরাও লাভবান হচ্ছি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বাবুল বলেন, সাগরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। এতে জেলেরা খুশি। আমি তাদের মঙ্গল কামনা করছি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইলিশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close