চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

  ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

গোয়ালঘরে অসহায় মা, ফ্ল্যাটবাড়িতে ছেলে  

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

যশোরের চৌগাছায় অসুস্থ অবস্থায় গোয়ালঘরে ফেলে রাখা মাকে উদ্ধার করে ছেলের ফ্ল্যাটবাড়িতে তুলে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা। উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের বুড়িন্দিয়া গ্রামের আবদুল কাদেরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

অসুস্থ ওই নারীকে গোয়ালঘরে ফেলে রাখার সংবাদ পেয়ে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইউএনও পুলিশ নিয়ে উপস্থিত হন ওই বাড়িতে। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় অসুস্থ মা (৬৫) গোয়ালঘরের ময়লার মধ্যে মেঝেতে একটি কাঁথার ওপর অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছেন।

গোয়ালঘরটি ছাদের হলেও তীব্র গরম। সেখানে নেই কোনো বৈদ্যুতিক বা হাতপাখার ব্যবস্থা। অথচ পাশেই সম্পূর্ণ পাকা একটি ছাদের রান্নাঘরে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে বৃদ্ধার পুত্রবধূ রান্না করছেন। পাশেই চার রুমের আলিশান একটি ফ্ল্যাটবাড়ি। যার প্রতিটি রুমের মেঝে, ছাদে ওঠার সিঁড়ি টাইলস করা। কক্ষগুলো টিভি, ফ্রিজসহ আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। এ সময় পুত্রবধূর কাছে বৃদ্ধাকে কেন এই ময়লার মধ্যে গোয়ালঘরে রাখা হয়েছে জানতে চান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি প্রথমে বলেন, উনি কাপড়-চোপড়ে মূত্রত্যাগ করে ফেলেন বলে লোকজন বলেছে গোয়ালঘরে রাখতে। আর বৃদ্ধা নিজেই এখানে থাকতে চেয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বৃদ্ধার ঝগড়াটে পুত্রবধূর ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। বৃদ্ধার একমাত্র ছেলের ঘরে দুই ছেলে আছে। বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট ছেলে প্রবাসী। তিন দিন আগে মেয়ের জামাই বৃদ্ধাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর থেকেই তাকে গোয়ালঘরে ফেলে রেখেছেন ছেলে ও পূত্রবধূ।

এ সময় বৃদ্ধা ইউএনওকে জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি তার চার মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কয়েক দিন আগেও বরিশালে ছোট মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে কয়েক দিন আগে আসেন চৌগাছার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে আরেক মেয়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি বাঁশের ওপর পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। মেয়ের জামাই খুবই গরিব পরিবারের হওয়ায় তাকে হাসপাতালেও নেননি বা চিকিৎসাও করাননি। মেয়ের জামাই তিন দিন আগে তাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যান। সেদিন থেকেই ছেলে ও তার বউ তাকে গোয়ালঘরে ফেলে রেখেছেন।

বৃদ্ধা আরো জানান, যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করছেন। তার দুচোখ জ্বলে যাচ্ছে। রাতে বা দিনে কোনো সময় তাকে একটি ফ্যানও দেওয়া হয়নি।

তিনি জানান, মেয়ের বাড়িতে তিনি ভালোই ছিলেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় কয়েকজনকে সথেঙ্গ নিয়ে বৃদ্ধাকে ছেলের ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে তুলে দেন। এরপর ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় পুত্রবধূর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।

বৃদ্ধা আমৃত্যু ছেলের ফ্ল্যাটবাড়ির কক্ষে থাকবেন। কাপড়-চোপড় নষ্ট করে ফেললে ছেলে-পুত্রবধূরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেবেন। আর সোমবারই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এ সময় ওই পুত্রবধূ বলেন, আমাদের তাকে ডাক্তার দেখানোর মতো টাকা নেই। তখন তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘এ ঘটনাটিতে আমি অবাক হয়েছি। একমাত্র ছেলে। তিনিও নিজের মাকে গোয়ালঘরে গরুর মলমূত্রের মধ্যে ফেলে রেখেছেন। ওই নারীকে ছেলের ঘরে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং ডাক্তার দেখাতে বলা হয়েছে। এরপর কোনো অবহেলা করা হলে ছেলে ও পূত্রবধূর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মা,চৌগাছা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close