গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২৫ আগস্ট, ২০২২

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে ডাক বিভাগ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিওন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌছাইতাম। বলে ছিলে তুমি চিঠি দিও মোরে’- সেই গানের কলি বাস্তবে রূপ নিয়ে আজ গ্রাম বাংলার অতিতের এক মাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ডাক বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ায় এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। সকাল থেকে ডাকে না আর ডাক হরকরা, আসে না চিঠি। যার ভেতরে লুকিয়ে থাকতো অনেক অনুভূতির অনুকরণ, আনন্দের কোলাহল কিংবা চক্ষু ভেজা জলে হতাশার চাপা দীর্ঘশ্বাস।

অতীতে এই চিঠি বয়ে আনত কারো শেষ বিদায়ের কান্নাভেজা খবর। আবার কখনো অপেক্ষামান মায়ের কাছে বয়ে আনে সন্তানের লেখা সু-খবরের একখানা কাগজ। যার নাম পোস্ট কার্ড, ইনভেলাপ (খাম)। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা যখন অভ্যস্ত ছিলাম না তখন এই চিঠিই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

আজকাল গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র প্রযুক্তির প্রভাবে চাপা পড়েছে চিঠির অধ্যায়। শুধু সরকারি নথিপত্র পাঠানোর কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে ডাক বিভাগ।

আধুনিক ডাক ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে পৌনে দুইশ বছর ধরে রচিত হয়েছে মানুষের অগ্রযাত্রার ইতিহাস। সেই প্রাচীনকাল থেকেই চিঠির মাধ্যমে উঠে এসেছে মানুষের জীবনযাত্রার ইতিহাস। সৃষ্টিশীলতার বিকাশও ঘটতে দেখা গেছে চিঠির মধ্য দিয়ে।

একটা সময় চিঠি ছিল তারুণ্যের উচ্ছাসে হৃদয়ের আবেগের এক মধুময় পাঠশালা। আবেগ মাখা সেই চিঠি লেখার অভ্যাস মানুষের মাঝ থেকে হারিয়েই যাচ্ছে। চিঠি লেখার প্রবণতা কমে আসায় এর ভাষার নান্দনিকতা, শিল্পতা হারিয়ে যাচ্ছে। ডাক বিভাগের ডাকপিয়ন হলুদ খামে ভরা গুপ্ত কথার ঝুলি নিয়ে ঘুরে ঘুরে যে চিঠি বিলি করতো সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। সকাল থেকে হাঁকে না হরকরা-চিঠির ঝুলি নিয়ে ঘরে দরজার কড়া নাড়ে না রানার।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে ডাক বিভাগকে লোকসান গুনতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাক বিভাগের দিকে সরকারি নজরদারি না বাড়ালে সামনে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে।

সিরাজগঞ্জ প্রধান পোস্ট অফিসের সহকারী মাস্টার আশরাফুল ইসলাম জানান, পোস্ট কার্ড, খাম আগের মতো আর সাপ্লাই নেই। সিরাজগঞ্জ পোস্ট অফিস পরিদর্শক কামরুজ্জামান জানান, জেলায় পোস্ট অফিস সংখ্যা মোট ১৯৯টি।

সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল কাম পোস্ট মাস্টার আব্দুল লতিফ বলেন, ‘এফ ডি, এস বি, সঞ্চয়পত্র সবগুলো পারিবারিক সঞ্চয়পত্র জিইপি পোস্ট অফিসে চালু আছে। অফিস, আদালতের চিঠিপত্র ছাড়া ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের সংখ্যা অনেক কম। কর্মচারির সল্পতাও আছে। রেজিঃ, জিপি পার্শেল, ইসু এবং বিলি, সঞ্চয়পত্রের কাজ অনলাইনে হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে পোস্ট অফিসের গতি কিছুটা অব্যহত থাকলেও আগের মত নেই। হের দুল্লা গ্যাদা, দোয়া নিস হুনলাম অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ছোঁয়ায় হেই চিঠি ও ডাকবাক্সু, ডাকঘর আরায়া যাইত্যাছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে চিঠি পত্র আদান প্রদান কইমা যাওয়ায় দিন দিন রাজস্ব আয়ও কইমা যাইত্যাছে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,পোস্ট অফিস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close