লুৎফুল আলম সজল, নড়াইল

  ২০ আগস্ট, ২০২২

সনাতন পদ্ধতিতে পাটজাগ, নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র বিপন্ন

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

নড়াইলের মিষ্টি পানির নদী হিসেবে খ্যাত নবগঙ্গা, চিত্রা ও কাজলা নদী। এসব নদীতে প্রতি বছর সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ার কারণে দেশি প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে, বিপন্ন হতে চলেছে জীববৈচিত্র।

জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে সরকারিভাবে রিবন রেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে পাটের আঁশ ছাড়ানো চালু হলেও তা জনপ্রিয়তা পায়নি। অধিকাংশ কৃষক এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। আর যারা জানেন তারা বলছেন এ পদ্ধতিতে সময় ও উৎপাদন খরচ বেশি। এদিকে নদীগুলো মৎস শূন্য হওয়ায় এলাকার ৫ শতাধিক নদী তীরবর্তী জেলে সম্প্রদায় পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তারা চলে যাচ্ছেন ভিন্ন পেশায়। নদীতে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ বন্ধ করতে, জেলে সম্প্রদায়কে বাঁচাতে, দেশি প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই।

দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা ও চিত্রা নদীর তীরবর্তী লোহাগড়ার নালিয়া, মিঠাপুর, নলদী, বাতাসি, সদরের হবখালী, কাগজিপাড়া, ময়েনখোলা, শংকরপুর, শাহাবাদ, মাইজপাড়া, রতডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০ কি.মি জুড়ে বর্ষা মৌসুমে নদীর দুতীরে পাটজাগ দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে প্রতি বছর বিস্তীর্ণ এলাকার পানি পচে মাছ মরে যাওয়ায় নদীগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। ওই সব নদীতে দেখা যায় না শুশুক (ডলফিন) সহ বিভিন্ন জলজপ্রাণি। বিভিন্ন সময় বিল-খাল থেকে কিছু কিছু মাছ নদীতে নেমে আসলেও প্রতি বছরের অত্যাচারে সেসব মাছ টিকে থাকতে পারছে না।

চিত্রা নদীর তীরে রতডাঙ্গা গ্রামের মৎসজীবী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও উত্তম সরকার বলেন, প্রতি বছর নদীতে পাটজাগ দেওয়ায় দেশি প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ বছরও নদীর পানি পচে কালি বাউস, দেশী সরপুঁটি, বেলে, রুই, কাতলা, মৃগেল, গলদা চিংড়ি মরে আর পাওয়া যায়না। মৌসুমের প্রায় সাড়ে ৩ মাস নদী মৎসশূন্য হয়ে পড়ায় কোনো কাজ থাকে না। ফলে পূর্বপুরুষের এ পেশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এছাড়া এ ক’মাস পানির দূগন্ধে এলাকায় থাকা দুস্কর হয়ে পড়ে।

পাট চাষি সদর উপজেলার রউফ তরফদার (৪৫), লোহাগড়া উপজেলার বাতাসি গ্রামের আলম হোসেন (৫২), সদরের সিঙ্গিয়া গ্রামের পাট চাষী এনামুল বেগ (৪০) জানান, পাট জাগ দেওয়ার উন্মুক্ত ডোবা এবং বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই মাছের ক্ষতির কথা ও রোগ ব্যাধি হয় জেনেও প্রতি বছর নদীতে পাট জাগ দিতে হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নদীগুলোতে পাট জাগ দেওয়ায় পানির বিষক্রিয়ায় মাছ মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশি প্রজাতির মৎস সম্পদের বিপন্ন অবস্থা। এ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে মাসিক সমম্বয় মিটিংয়ে আলাপ হয়েছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। মৎস্য সংরক্ষণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ করা উচিত। কৃষি বিভাগ এ সমস্যা সমাধানে যত্নশীল ও সজাগ হলে এ অবস্থা হতো না।

নড়াইল কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, প্রতি বছরই জেলায় পাট চাষ বাড়ছে। এ বছর ২৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কৃষকদের আমরা উদ্বুদ্ধ করছি নদীতে পাট জাগ না দিতে। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি বা উদাসীনতা নেই। আমরা এখন কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি বাড়ির পাশে পতিত জমিতে গর্ত করে পলিথিন দিয়ে পানি ধরে রেখে পাট জাগ দিতে হবে। এটা গবেষণালব্ধ ফল। এ পদ্ধতি সীমিতভাবে শুরু হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জীববৈচিত্র বিপন্ন,সনাতন পদ্ধতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close