কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান একাংশের, বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ
চা-শ্রমিকদের টানা ৮ম দিনের কর্মবিরতির দিনে শ্রীমঙ্গলের শ্রম দপ্তরের বৈঠকে দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণের সমঝোতা প্রস্তাব মেনে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এদিকে নেতাদের এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিকদের একাংশ। তারা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনড় থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারা বৈঠকস্থলেই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সারাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা ৮ম দিনের মতো ধর্মঘট পালন করেন। তাদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিপূর্বে শ্রীমঙ্গলের শ্রম দপ্তর ও ঢাকায় কয়েক দফা বৈঠক হয়। প্রথম দফায় ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হলে শ্রমিকরা প্রত্যাখান করেন। অবশেষে ৩য় দফায় চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শনিবার বিকালে শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরে চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার পক্ষের বৈঠক হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ২৫ টাকা বাড়িয়ে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারিত হয়। এরপর ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল।
এর কিছু পরেই বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী, চা ছাত্র যুবনেতা মোহন রবিদাসের নেতৃত্বে শ্রমিকদের একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ধনা বাউরী ও মোহন রবিদাস বলেন, সভা শুরুর পূর্ব থেকেই পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। মোহন রবিদাস বলেন, পরে তাদের চাপের মুখে ফেলে ও পুলিশ আমার উপর টর্চার করেছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পালকে দিয়ে ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানবো না। ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমাদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা মেনে নিতে এবং ধর্মঘট স্থগিত করতে। সেই প্রেক্ষিতে আপাতত ১৪৫ টাকা মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল এ ঘোষণা দেন। তবে আমাদের একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
সীতারাম বীন, দয়াশংকরসহ কয়েকজন চা শ্রমিক নেতা বলেন, পরিবারে শিশু সন্তান নিয়ে চা শ্রমিক পরিবার সদস্যরা নিদারুন কষ্ট ভোগ করছেন। শ্রমিকরাও চা বাগানের ক্ষতি হোক তা চায় না। তবে বর্তমানে জিনিসপত্রের যে পরিমাণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে স্বল্প এই মজুরিতে এক লিটার সয়াবিন তেলও কেনা যাবে না।
চা শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর. শমশেরনগর, মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানে মজুরি প্রত্যাহার করে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে রোববার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহবান জানান।