কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

  ১৮ আগস্ট, ২০২২

কুড়িগ্রামের পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয় 

৩০ বছর ধরে একাই সব সিদ্ধান্ত নেন প্রধান শিক্ষক!    

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে নেই নিয়ম মানার কোনো বালাই। শিক্ষা নীতিমালা কিংবা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতেও নিয়ম-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা করেন না প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ রায়। ফলে পাঠদানে নেই শৃঙ্খলা। হচ্ছেনা বিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়নও। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর নিয়ম ও বিধি অনুসরণ না করে শিক্ষক নিয়োগ, বেতন দিতে জটিলতা এবং ৩০ বছর ধরে একক সিদ্ধান্তে মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে স্বেচ্ছাচারিতার রাজ্য বানিয়েছেন বিদ্যালয়টিকে। এসব অভিযোগ তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে তার দুর্নীতি আর অপকর্মের থলের বিড়াল।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন শ্রী জিতেন্দ্রনাথ রায়। এই দীর্ঘ সময় শুধু নিয়োগ বাণিজ্য করেই বিদ্যালয় উন্নয়নের অজুহাতে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। তিনি নিয়োগ বাণিজ্য হাসিল করার জন্য প্রতিবারই করেন মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি। গত ৫ জুলাই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সই জাল করে বিল উত্তোলনের চেষ্টার বিষয়টি ফাঁস হলে অন্য শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় শিক্ষকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এদিকে, ২০১৫ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর নিয়মনীতি না মেনে কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ৪ জন শিক্ষককে গোপনে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র নাথ। তবে নিয়োগ করা শিক্ষকরা আজ পর্যন্ত পাননি বেতন-ভাতা। অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র নাথ রায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আবারো নতুন করে ৪ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য একটি পকেট ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রতিকার চেয়ে গেল ২ আগস্ট কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তের জন্য সহকারী উপজেরা শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন দায়িত্ব প্রদান করেন। পরে গত ১৭ আগস্ট তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়।

বিদ্যালয়ের বেতন-ভাতাবঞ্চিত শিক্ষক এরশাদুল হক বলেন ২০১৫ সালে যোগদান করলেও এ পর্যন্ত বেতন ভাতা হচ্ছে না। ডিজি অফিস থেকে বার বার কাগজপত্র ফিরিয়ে দিচ্ছে। কি জটিলতা বুঝতে পাচ্ছি না।

অভিযোগকারী পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম খাঁন বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলির সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন আশা করছি।

ওই স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও পাঁচগাছী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক শুরু থেকেই দুর্নীতিতে জড়িত। আমি চাই স্কুলের উন্নয়ন। সন্তানরা পড়ালেখার সুযোগ পাক। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অপকর্মের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এর প্রতিকার চাই।

এ ব্যাপারে পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, আমি ৩২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। স্কুলের উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে ৪/৫ লাখ করে টাকা নিয়েছি। ব্যক্তিগত কাজের জন্য টাকা নেইনি।

ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে ৩০ বছরে আমি মাইকিং, অভিভাবকদের অবহিত কিংবা প্রচার চালিয়ে কমিটি গঠন করিনি। কারণ প্রয়োজন হয় নাই। যা করেছি তাতে সবাই সম্মতি দিয়েছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তদন্তে কিছুটা অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তবে সুষ্ঠু প্রতিবেদনের স্বার্থে সবকিছু বলতে পাচ্ছি না।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রধান শিক্ষক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close