নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁ সদর হাসপাতাল থেকে উধাও সেই শিশু
নওগাঁয় ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য অবহেলায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে অজ্ঞাত এক নবজাতক নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে রবিবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের চতুর্থ তলার সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে বাচ্চা নিখোঁজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায় কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার সিঁড়িতে এক টুকরো কাপড়ে মোড়ানো ছিল নবজাতকটি। শিশুটির কাঁন্নায় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মানুষ ভীড় করছিল। মানুষের চিৎকার শুনে এগিয়ে যান দায়িত্বরত ওয়ার্ডবয় রাজু হোসেন। এ সময় শিশুটি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল। অজ্ঞাত হওয়ায় রাজু শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে ৫ম তলা শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করায়।
শিশুটি ৪/৫ দিন বয়সী হয়ে থাকতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছিল। শিশুটি উদ্ধারের পর বিষয়টি তাৎক্ষণিক সদর মডেল থানা পুলিশকে জানায় কর্তৃপক্ষ। নিরপত্তার জন্য রাতেই এক মহিলা পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটিকে দেখভালের জন্য হাসপাতালে শিশুটির সঙ্গেই ছিলেন ওই নারী কনস্টেবল। রাতেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা করাসহ চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে রাখা হয়েছিল। পরের দিন এবিষয়ে থানায় সাধারন ডায়েরি করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় শিশুটিকে রেখে চলে আসেন ওই নারী কনস্টেবল। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে দেখা গেলেও দুপুর ১টার পর আর দেখা যায়নি।
শিশু ওয়ার্ডে তৎকালীন সময়ে দায়িত্বরত ইন্টার্ন নার্স আকলিমা খাতুন বলেন, ‘বাচ্চার অভিভাবক পরিচয়ে দুইজন মহিলা কেএমসি ইউনিটে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করেছিল। পাশের কক্ষে রোগী দেখতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর কেএমসি ইউনিটের ফিরে এসে কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে দরজা বন্ধ রেখে তারা আমাকে কিছুক্ষণ পর আসতে বলেন। একটু পর এসে দেখি শিশুটি এবং ওই দুইজন মহিলা কোথাও নেই।’
শিশু বিভাগের প্রধান ডা. রতন কুমার সিংহ বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে রাউন্ডে বাচ্চাটিকে দেখার পর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তারপর বাচ্চাটি কীভাবে নিখোঁজ হলো আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কিছু জানতে হলে তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
নওগাঁ সদর মডেল থানার (ওসি তদন্ত) রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু পাওয়ার খবর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় জানালে সেখানে একজন নারী কনস্টেবলকে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে একটি সাধারন ডায়েরি করে। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে অভিভাবক প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগতভাবে বাচ্চাটি তারা হস্তান্তর করবে এমন লিখিত দিলে বাচ্চাটি তাদের হেফাজতে বুঝিয়ে দেয়ার পর নারী কনস্টেবল চলে আসে। বাচ্চা হারানোর ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, ‘বাচ্চাটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বুঝেও দেয়া হয়। আমরা শুধু নিজেদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। পরে বাচ্চাটিকে ছাড়পত্র ছাড়াই কে কীভাবে নিয়ে গেছে আমার জানা নেই।’
কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বাচ্চাটি চুরি হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো দায়িত্ব অবহেলা ছিল না। বাচ্চা হস্তান্তরের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমরা শুধু নিজেদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। শুনেছি বাচ্চাটির মা এবং নানী পরিচয়দানকারী দুইজন মহিলা তাকে নিয়ে চলে গেছে।’