মো. আবু সাইদ খোকন , আমতলী (বরগুনা)

  ১৪ আগস্ট, ২০২২

আমতলী তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দুর্ভোগে দু’লাখ মানুষ

লঘুচাপের প্রভাব ও অতিবর্ষণে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে জোয়ারে পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বরগুনার আমতলী পৌরশহরসহ আমতলী ও তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমতলী- পুরাকাটা ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার আউশের ধান ও আমনের বীজতলা এবং আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক। আমতলী ও তালতলী উপজেলার অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের বসতবাড়ী তলিয়ে গেছে। অনেকে ঘর-বাড়ী ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। মাঠ-ঘাট থই-থই করছে। আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। স্লুইজগেটগুলো দিয়ে তেমন একটা পানি নিস্কাশন সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে আউশ ধান ও আমনের বীজতলা নস্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। দ্রুত তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে দাবি জানিয়েছেন।

রবিবার (১৪ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আমতলীর ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, আমুয়ারচর, গরুর বাজার, ওয়াবদা ব্লক এলাকা পৌর শহরের পুরাতন বাজার, মিঠা বাজার (বউ বাজার) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় বুক পরিমাণ পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষ সড়কে উঠছে। ফেরী চলাচল না করায় জেলা শহর বরগুনার সাথে ৪ ঘন্টা সড়কপথে যান চলাচলে বন্ধ ছিলো। বেরীবাঁধ না থাকায় রবিবারও জোয়ারের পানিতে উপজেলার গাজীপুর বন্দর নিমজ্জিত ছিল। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পৌর শহরের পুরাতন বাজারের সড়কে হাটু পরিমাণ পানি উঠায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

তালতলী উপজেলার ফকিরহাট, নিশানবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, ছকিনা, নিউপাড়া, গাবতলী, বগীসহ অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বেরীবাঁধের বাইরে বসবাসরত পরিবারগুলোকে সাবধানে ও নিরাপদে আশ্রয় থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্তক করতে বলা হয়েছে।

বেড়ীবাঁধের বাহিরে বসবাসতরত আমতলী আমুয়ারচরের বাসিন্ধা ছকিনা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে মোগো ঘর তলাইয়া গেছে। দুপুরে রান্না পর্যন্ত করতে পারিনি। চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের কৃষক শানু মিয়া জানায়, বিলের চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। আমাদের এলাকার সকল জমিতে রোপনকৃত আউস ধান ও আমনের বীজতলা পানির নিচে। বেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসতরত তালতলীর জয়ালভাঙ্গা এলাকার জেলে সোবাহান মাঝি জানান, তিনি উচু বেরীবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় উপজেলার সর্বত্র জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকের আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পানির নীচে নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আরো বৃদ্ধি পেলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম পান্না মুঠোফোনে বলেন, পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি বেড়ে দুই উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে কোথাও বেরীবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকেনি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমতলী,তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close