reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ আগস্ট, ২০২২

আমন চাষে বাড়তি খরচ, সারের জন্য কাড়াকাড়ি

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বগুড়ার আদমদীঘি ও নন্দীগ্রাম এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কৃষকরা আমন চাষে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কিন্তু সারের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে তারা বিপাকে পড়েছেন। বৃষ্টিহীন শ্রাবণে তাদের পাম্প দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে চাষিদের। ডিজেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে চাষের খরচ। শ্রমিকের মজুরি আর শ্রমিক সংকটেও রয়েছেন তারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি জানায়, হঠাৎ ইউরিয়া সারের দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়ায় চাষিরা চোখে সরষে ফুল দেখছেন। মৌসুমের বৃষ্টির অভাবে জমিতে পাম্প দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। এরপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হেনেছে ডিজেলের দাম। ফলে পাওয়ার টিলারে জমি চাষের মূল্য বেড়ে গেছে। সার, সেচ আর হাল চাষের মূল্য বাবদ এবার আমন মৌসুমে বগুড়ার আদমদীঘিতে কৃষকরা বাড়তি খরচের চাপে রয়েছেন।

উপজেলার সান্তাহারের কৃষক আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি গত আমন মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে পাওয়ার ট্রিলারে চাষের জন্য নিতেন ১৮০ টাকা (একচাষ)। ডিজেলের দাম বাড়ায় প্রতিবিঘায় এক চাষের মূল্য ২৫০ টাকা নির্ধারণ করেছেন।

কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়া সার ৩০ কেজি ৬৬০-৬৮০ টাকা, পটাশ ১৫ কেজি ৩৬০, ফসফেট ১৫ কেজি ৪২০, জিপসাম ১০ কেজি ২২০ টাকা। এছাড়া শ্রমিক, হালচাষ ও চারা রোপণ করতে ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং সেচ খরচ হবে ১ হাজার টাকা।

বিগত মৌসুমগুলোতে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এবার সার, সেচ ও হালচাষ খরচে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো বেশি।

উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, এবার বৃষ্টি নেই, চাষ হচ্ছে সেচের ওপর নির্ভর করে। সঙ্গে শ্রমিকের সংকট ও মজুরি বৃদ্ধি, ডিজেল তেল ও ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বিক্রেতারা যেন কোনোভাবেই অতিরিক্ত মূল্য না নিতে পারে এজন্য নজরদারি রয়েছে। যদি কেউ সারের দাম বেশি নেয় তাহলে মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানায়, বগুড়ার নন্দীগ্রামে আমন রোপণের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এমনিতেই হতাশ কৃষক। তার ওপর সার সংকট এবং সারের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মিলছে সারের স্লিপ। ডিলারদের মাধ্যমে সারের স্লিপ পেতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি করতে হচ্ছে। আবার কৃষকের ভিড় সামাল দিতে কখনো মোতায়েন করা হচ্ছে পুলিশ।

জানা গেছে, এবার শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললেও বৃষ্টির দেখা নেই। পানির অভাবে খেতে সেচ, আগাছা পরিষ্কার, রোগ ও পোকার আক্রমণ রোধে সার, কীটনাশক প্রয়োগে নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এদিকে কৃষকদের এই দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সারের দাম আরো বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ।এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করেছেন। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না সিন্ডিকেট। চলতি বছরে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।কিছুদিন ধরে উপজেলায় সারের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রবিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার কুন্দারহাট বাজারে মেসার্স ছারওয়ার এন্টারপ্রাইজের সামনে সারের জন্য কৃষকের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কৃষকদের সামলাতে না পেরে পুলিশের সহযোগিতায় পরে লাইনে দাঁড়িয়ে সার বিতরণ করা হয়। কিন্তু দেরিতে হলেও সার পেয়ে খুশি অনেক কৃষক।

উপজেলার চকরামপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, আমন ধানের চারা ১০ বিঘা জমিতে রোপণ করেছেন তিনি। তীব্র তাপপ্রবাহে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর ‘স্লিপ’ সংগ্রহ করে সার পেয়েছেন।

উপজেলার কহুলি গ্রামের আবদুস সামাদ বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে খুব কষ্টে ঠেলাঠেলি করে স্লিপ পেয়েছি। তা-ও আবার এক বস্তার বেশি দেয় না। আমন ধান রোপণের পরে এখনো সার দিইনি। সারের এমন সংকট হবে কল্পনা করিনি। আমন চাষের যে এবার কী হবে বলতে পারছি না। তার মতো অনেক কৃষকের একই অবস্থা।

এবিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলার গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মোকলেছুর রহমান বলেন, এই উপজেলায় সারের সংকট নেই। তবে কিছু কৃষক চাহিদার তুলনায় বেশি সার নিচ্ছে। যার কারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সার বিক্রি করতে আমাদের হিমশিম খাচ্ছি।

জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু বলেন, এই উপজেলায় চলতি আগস্ট মাসে ৮৭০ টন সার বরাদ্দ পেয়েছি। সারের কোনো সংকট নেই। তবে কিছু কৃষক গুজবে রবি মৌসুমের আগাম সার কেনার কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। সার নিয়ে যেন কোনো ডিলার বা ব্যবসায়ী ফায়দা লুটতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও হচ্ছে।

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানায়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মেশিনে জমিতে সেচ দিয়ে আমন ধানের আবাদ করতে খরচ বেড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উল্লাপাড়া উপজেলায় ৯ হাজার ১২৫ হেক্টর পরিমাণ জমিতে এবারে রোপা আমন ধানের আবাদের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।উপজেলার সলঙ্গা, হাটিকুমরুল, বড়হর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে কৃষকরা রোপা আমন ধানের আবাদ করছেন।

উপজেলার মধুপুর মাঠের সেচ মেশিন মালিক কৃষক জামাল আকন্দ জানান, তার স্কিমের প্রায় বিঘা বিশেক জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হবে।একই আরো কজন কৃষক জানান, ডিজেলের দাম বাড়ায় পাওয়ার টিলারে এখন বিঘাপ্রতি হালচাষে ১৫০ থেকে ২৫০টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। আগে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হতো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, কৃষি প্রণোদনায় তার বিভাগ থেকে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রোপা আমন ধান বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে।মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের রোপা আমন আবাদে পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমন চাষ,বাড়তি খরচ,সারের জন্য কাড়াকাড়ি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close