খালেকুজ্জামান পান্নু, পাবনা

  ১৪ আগস্ট, ২০২২

সাঁথিয়ায় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ঘর নির্মাণ অসমাপ্ত রেখেই সব টাকা উত্তোলন

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

পাবনার সাঁথিয়ায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ঘর নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে দরিদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫টি গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ৫টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ করা হয় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫’শ টাকা। মোট বরাদ্দ দেয়া অর্থের পরিমাণ ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ টাকা। এছাড়াও মালামাল পরিবহনের জন্য প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ দেয় হয় ৫ হাজার টাকা। এই ঘরগুলো তৈরি করার দায়িত্ব ছিল সাঁথিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির উপর। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জামাল আহমেদ

যারা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, মায়া রাণী দাস পিতা-রাইচরণ দাস গ্রাম-নাগডেমড়া; গোবিন্দ চন্দ্র দাস, পিতা-কালিপদ দাস, সিপন চন্দ্র দাস, পিতা-সুবাস চন্দ্র দাস, উভয়ের বাড়ি করমজা; অমরেশ চন্দ্র দাস ও কর্মচন্দ্র দাস উভয়ের পিতা-ভাদুচন্দ্র দাস বাড়ি কাশিনাথপুর। এরা ঋষি ও রাই সম্প্রদায়ের লোক।

সরেজমিনে বাড়িগুলোর কি অবস্থা তা দেখতে কয়েকজন সাংবাদিক গত শুক্রবার (১২ আগস্ট) ও শনিবার গিয়েছিলেন নাগডেমড়া, কাশিনাথপুর এবং করমজা গ্রামে। নাগডেমড়া গ্রামের মায়া রাণী দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের দেওয়াল গাঁথা হয়েছে তবে প্লাস্টার হয়নি। অসমাপ্ত রয়েছে বারান্দার পিলার তৈরি, উপরের টিনের ছাউনি হয়নি। দরজা, জানালা এবং মেঝের কাজ কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে মায়া রাণী বললেন, রাজমিস্ত্রি কাজ করে কিন্তু তার সঙ্গে কোন শ্রমিক থাকে না। শ্রমিকের কাজ করতে হয় মায়ারাণীর ছেলেকে। ইট-বালু, খোয়া-সিমেন্ট নৌকা ও মাথায় করে নির্মাণ স্থলে আনতে হয় আমার ছেলেকে। এর জন্য কোন পারিশ্রমিক দেওয়া হয় নাই।

একই কথা বললেন অমরেশ চন্দ্র দাস ও কর্ম চন্দ্র দাস। অমরেশ এবং কর্ম চন্দ্র শ্রমিকের কাজ করেন রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে। এর বিনিময়ে তারা কোন পারিশ্রমিক পাননি। তারা আরও বললেন, নির্মাণ কাজের জন্য তারা দুই ভাই মিলে একটি পানির পাম্প মেশিন কিনেছেন। এই পাম্প মেশিনের বিদ্যুৎ বিলও তাদের পরিশোধ করতে হয়। অমরেশ ও কর্ম চন্দ্রের ঘর দুটির কাজ অসমাপ্ত পরে আছে। টিনের চালার ছাউনি লাগানো হয়েছে। বারান্দার কাজ, দরজা, জানালা মেঝের ঢালাই ও প্লাস্টারের কাজ হয়নি। করমজা গ্রামের গোবিন্দ ও সিপনের বাড়ির কাজ এখনও পুরোপুরি হয়নি। যেনতেনভাবে মেঝের ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। দরজা-জানালার সিআইসিট খুবই নিম্নমানের।

প্রকল্পটির কাজ করেন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া) এস এম জামাল আহমেদ। তিনি প্রকল্পের সমূদয় টাকা উত্তোলন করেন গত ২৭ জুন। ইউএনওর পক্ষে এই প্রকল্পের কাজ করেন বেড়া উপজেলার সানিলা গ্রামের এম এন আসিফ ওরফে বাবু। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ৫টি ঘর নির্মাণের সমূদয় টাকা পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, কাজ প্রায় শেষ। যদিও সাংবাদিকরা গিয়ে কাজের অগ্রগতি ও পরিস্থিতি দেখেছেন। তিনি প্রতিটি ঘরের জন্য পেয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজার পাঁচশ টাকা।

এ ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘জুন ফাইনালের জন্য তো অসমাপ্ত কাজের অব্যহৃত টাকা উত্তোলন করে রাখতেই হয়েছে।’ তবে এই টাকা কোন তহবিলে গচ্ছিত আছে তার সদুত্তোর তিনি দেননি।

সাঁথিয়ার বর্তমান (সদ্য যোগদানকারী) উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুদ হোসেন অসমাপ্ত ঘর সমূহের কাজ পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে (এম এন আসিফ) ২০ আগস্টের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছি।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাঁথিয়া,প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ঘর নির্মাণ,অসমাপ্ত,সব টাকা উত্তোলন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close