কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ১৪ আগস্ট, ২০২২

শ্রমিক ধর্মঘটে অচল কমলগঞ্জের ২২ চা বাগান

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

চা বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চা শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে ১৬৭টি চা বাগানে চার দিনের (প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে ১১টা) কর্মবিরতি পালিত হওয়ার পর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ভ্যালির যৌথ সিদ্ধান্তে শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর হালিমা বাজার, শমশেরনগর চৌমুহনা চত্বরে শনিবার সকাল ১১টা থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন চা শ্রমিকরা। এছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চা বাগানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এসব চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। শনিবার সকাল ১১টায় কমলগঞ্জের হালিমাবাজারে আলীনগর চা বাগান পঞ্চায়েতের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গণেশ পাত্র, সজল কেরী প্রমুখ।

এদিন দুপুর ১২টায় শমশেরনগর বাজারে শমশেরনগর চা বাগান, কানিহাটি চা বাগান, দেওছড়া চা বাগানের চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এখানে প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: জুয়েল আহমদ, মনু দলই ভ্যালীর সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী, মহিলা সদস্যা নমিতা সিংহ, শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল, মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন, চা শ্রমিক ছাত্রনেতা মোহন রবিদাস প্রমুখ।

কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগান শ্রমিকরা সকাল থেকে জড়ো হয়ে শমশেরনগর-ভানুগাছ সড়ক অবরোধ করেন। এসময়ে সড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাস্ত বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবাদ সভা করা হয়। এদিকে শমশেরনগর চা বাগান শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শমশেরনগর বাজার প্রদক্ষিণ শেষে চৌমুহনা চত্বরে সমাবেশে মিলিত হন। দুপুর ২টায় আবারো কুলাউড়ার চাতলাপুর চা বাগান ও তিলকপুর চা বাগানের চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শমশেরনগর বাজারে চৌমুহনা চত্বর অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শরীফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন চিনু, চাতলাপুর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন বাউরী, চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, মোহন রবিদাস প্রমুখ। এসব বিভিন্ন সড়কে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে ন্যুনতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি অনেক দিনের। বক্তারা বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে চা শ্রমিকরা মাত্র ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কোনমতেই সংসার চালাতে পারছেন না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও আমাদের মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে না। ৩০০ টাকা মজুরি না হলে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন।

গত বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল। একযোগে দেশের ১৬৭টি চা বাগানে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে এই কর্মবিরতির কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। কর্মবিরতি পালনকালে সবক’টি চা বাগানে শ্রমিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিও পালন করেন।

এদিকে চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখা। সংগঠনের সভাপতি নুরুল মোহাইমিন মিল্টন ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান বাজার দরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মজুরি বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের সবচেয়ে নিষ্পেষিত ও অবহেলিত হলেন চা শ্রমিকরা। বর্তমানে তাদের সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা। একদিনের মজুরিতে এক লিটার সয়াবিন তেলও পাওয়া যায় না। অথচ চা-শ্রমিকদের শ্রমে উৎপাদিত ২৫০ গ্রাম চা-পাতার মূল্য বাজারে এক থেকে দেড়শ টাকা। চা-শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৬৮ টাকাও হয়নি। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা-শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থেকেছেন। তাই লাগামহীন দ্রব্যম‚ল্য বৃদ্ধির এ সময়ে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিনশ টাকা করা হোক।

এদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে ছয়, সাত জন শ্রমিক সদস্যের পরিবারের ভরনপোষনের জন্য চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৭০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানান।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শ্রমিক ধর্মঘট,অচল,কমলগঞ্জের ২২ চা বাগান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close