কামাল হোসেন, রাজবাড়ী

  ১৩ আগস্ট, ২০২২

জনবল সংকটে রাজবাড়ীর রেলওয়ে কার্যক্রম ব্যাহত

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

জনবল সংকটে চলছে রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনের কার্যক্রম। ফলে বন্ধ রয়েছে জেলার অনেক রেলওয়ে স্টেশন। অনেক স্টেশনের ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সেইসঙ্গে রেলওয়ের এমন অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো পদক্ষেপ।

রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী-ভাঙ্গা, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া, রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটে প্রতিদিন পাঁচটি ট্রেন ১৪ বার আসা যাওয়া করে। গোয়ালন্দ ঘাট-কুষ্টিয়া রুটে ১৪টি স্টেশনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ বাজারসহ পাঁচটি রেল স্টেশনে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা ৬৪ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন রয়েছে ১২টি। এরমধ্যে স্টেশন মাস্টার আছেন পাঁচটিতে। এ রুটে খানখানাপুর, বসন্তপুর, অম্বিকাপুর, ফরিদপুর কলেজ, বাখুন্ডা, তালমা ও পুকুরিয়া স্টেশনে মাস্টার নেই। রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া ৯৪ কিলোমিটার রেলপথের ১৭টি স্টেশনের মধ্যে ৯টিতে কোনো মাস্টার নেই। এ স্টেশনগুলো হলো রামদিয়া, আড়কান্দি, নলিয়া গ্রাম, ঘোড়াখালী, সাতৈর, বোয়ালমারী, সসরাইল, বনমালীপুর ও ব্যাসপুর। দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখিত স্টেশনগুলোতে বুকিং সহকারী পদও শূন্য রয়েছে। বন্ধ থাকা এসব স্টেশনে শুধু ট্রেন থামে, নেই কোনো কার্যক্রম।

ট্রেনের সময় সূচি অনুযায়ী আপ-ডাউন কাছাকাছিতে রয়েছে কয়েকটি ট্রেন। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে ক্রসিং দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ট্রেন ক্রসিংয়ে সময় লাগে অনেক বেশি। যেমন, রাজবাড়ী থেকে কালুখালীর মধ্যে রয়েছে সূর্যনগর ও বেলগাছি স্টেশন। এ দুটি স্টেশনই বন্ধ। মাঝে মধ্যেই খুলনা থেকে ছেড়ে আসা নকশী কাঁথা মেইল ট্রেন কালুখালী এসে দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ। কারণ, একই সময়ে রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়াগামী কালুখালী ভাটিয়াপাড়া মেইল ট্রেনটি গিয়ে থাকে। আবার দুপুরে নকশী কাঁথা মেইল ট্রেন যখন খুলনা অভিমুখে যায় তখন পোড়াদহ থেকে গোয়ালন্দ ঘাটগামী সাটল ট্রেনের আসার সময়। হয় মেইল ট্রেনকে রাজবাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নয়তো সাটল ট্রেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কালুখালীতে। কিন্তু বেলগাছি স্টেশনটি চালু থাকলে দুইদিক থেকেই সময় বাঁচতো।

সরেজমিনে সদর উপজেলার সূর্যনগর রেল স্টেশনে দেখা গেছে, আশপাশ নোংরা আবর্জনায় ভরা। স্টেশনে নেই কোন প্লাটফর্ম। ভবনের খুটি নষ্ট; দরজা জানালা খুলে পড়ছে। নেই যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা। স্টেশনের কক্ষে ঝুলানো রয়েছে তালা।

উপজেলার বেলগাছি স্টেশনে দেখা গেছে, স্টেশন মাস্টারের কক্ষটি তালা বন্ধ। টিকিট কাউন্টারের কক্ষটিও রয়েছে তালা ঝুলানো। যাত্রীদের বিশ্রাম কক্ষটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। ওইখানে কয়েকজন যাত্রী বসে আছেন ট্রেনের অপেক্ষায়। স্টেশন ভবনের বাইরে বসে আছেন বেসরকারি ট্রেনের টিকিট বিক্রির জন্য দায়িত্বরত একজন।

স্থানীয় রফিক মৃধা বলেন, যাত্রীরা রাজবাড়ী যাবেন, গোয়ালন্দ যাবেন কিন্তু ট্রেনে ওঠার মত কোন ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে স্টেশনে বসার কোন জায়গা নেই, টিকিট কাটার মত কোন জায়গা নেই। মাসুম খান নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, জেলার স্টেশনগুলো একসময় খুবই জমজমাট ছিলো। কিন্তু এখন কখন ট্রেন আসে আর যায় যাত্রীরাও জানে না।

বেলগাছি স্টেশনে বেসরকারি ট্রেনের টিকিট বিক্রেতা মো. মাজেদ বলেন, সরকারি ট্রেনের কোন টিকিট বিক্রি হয় না। কারণ স্টেশন মাষ্টার নেই, টিকিট বিক্রেতা নেই। সরকারি ট্রেনের যাত্রীরা টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠে। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে শুধু মাত্র বেসরকারি খাতের টিকিট বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টিটিই বলেন,‘রাজবাড়ী সেকশনে টিটিই রয়েছেন মাত্র চারজন। ট্রেন চলাচল করছে পাঁচটি। এর মধ্যে দুটি অবশ্য বেসরকারি খাতে রয়েছে। মাত্র চারজন টিটিই দিয়ে তিনটি ট্রেনের যাত্রী চেক আপ করা খুবই কষ্টকর। ফলে যাত্রীদের টিকিট কাটার ইচ্ছে থাকলেও টিকিট করতে পারে না। টিটিই সংকটের কারণে আমরাও পৌঁছাতে পারি না সব যাত্রীর কাছে। ফলে অনেক যাত্রীই বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমন করে।’

সূর্যনগর রেলওয়ে স্টেশনের পাহারাদার মো. সবুর আলী মোল্লা বলেন, এখানে এখন কোন টিকিট বিক্রি হয়না। যাত্রীদের বসার জায়গা নেই, বাথরুম নেই। এসব উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, জেলায় অনেক স্টেশনে লোকবল সংকট বিরাজ করছে। ফলে অনেক স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেইসঙ্গে ট্রেন ক্রসিংয়েও সমস্যায় পরতে হচ্ছে। সময় মত ট্রেন না পৌছানোয় ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে যাত্রীদের। জনবল সংকটের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

দেশের রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (পাকশী) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে বন্ধ থাকা স্টেশনে লোকবল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হলে সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব, তাছাড়া হবে না। স্টেশন বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব হারানোসহ ট্রেন ক্রসিংয়েও সমস্যায় পড়তে হয়।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজবাড়ী,রেলওয়ে,জনবল সংকট,পাকশী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close