প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
সবচেয়ে দামি ফল ‘শরিফা’!

দেশের বাজারে শরিফা ফল সাধারণত পাওয়া যায় আম-কাঁঠালের মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথেই। তবে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকার পাশাপাশি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সমস্যার কারণে এই ফলটি খুব বেশি বাজারে পাওয়া যায় না। খবর বিবিসির।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি অপ্রধান ও স্বল্প প্রচলিত ফল। তা ছাড়া এ ফল চাষেও দরকার হয় ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনা। ফলে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন না করলে শরিফা ফল চাষে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, শরিফা ফল চাষের ক্ষেত্রে সঠিক জাত নির্বাচন ও যথাযথ পরিচর্যা অপরিহার্য। আবার অতিরিক্ত যত্ন যেমন বেশি সার দেওয়া বা বেশি পানি দেওয়ার কারণেও কাক্সিক্ষত ফল নাও আসতে পারে। এই সংবেদনশীলতার কারণেই খুব সতর্ক থাকতে হয়। তাই সম্ভাবনা ভালো থাকলেও ফলটি চাষের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও কম নয়।
চুয়াডাঙ্গাতেই অল্প কিছু কৃষক শরিফা ফলের বাণিজ্যিক চাষের চেষ্টা করছেন গত কয়েক বছর ধরে। তবে এর মধ্যেই ফলটি চাষ করে সাড়া ফেলেছেন জেলার জীবননগরের কৃষক সাদ্দাম হোসেন।
সাদ্দাম জানান, তিনি থাই জাতের শরিফা ফলের চাষ শুরু করেছেন কয়েক বছর আগে, যেটি খুবই উচ্চ ফলনশীল। বছরে প্রতি বিঘায় প্রায় ৮/১০ লাখ টাকার শরিফা বিক্রি করেন।
সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয় শরিফা। এটি প্রতি কেজিতে ৪/৫টির মতো ফল পাওয়া যায়।
তার মতে, বাংলাদেশে যত ফল উৎপাদন হয় বাজারদর কিন্তু শরিফার বেশি। কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে ভারত থেকে ৪০০ চারা এনে পেয়ারার সাথে সাথি ফসল হিসেবে শরিফা চাষ শুরু করেছিলেন তিনি।
দাম বেশি হলেও ঝুঁকিও বেশি
শরিফা ফল ভীষণ প্রিয় গৃহিণী কুসুম আক্তারের। নিজের বসতঘরের পাশেই জানালার কাছে তিনটি শরিফা ফল গাছ লাগিয়েছেন। তিনি জানান, তিনটি গাছ থেকেই প্রতি বছর ফল পান তিনি। তার নিজের যেমন প্রিয়, তেমনি তার নাতি-নাতনিরাও ফলটি খুব পছন্দ করে।
বাংলাদেশে সাধারণত বসতবাড়িতে অন্য ফলের সাথে অনেকেই এভাবে দু-একটি শরিফা ফল গাছ রোপণ করেন শখের বশে। সে কারণে এটি বাজার থেকে কিনে খাওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশে এখনো খুবই কম। তা ছাড়া আম, জাম বা পেয়ারার মতো শরিফা ফল সবার কাছে এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
কৃষিবিদ তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, বেশি পরিচর্যা করলে বাগান থেকে কাক্সিক্ষত পরিমাণ শরিফা নাও পাওয়া যেতে পারে। আবার ভালো জাত না হলে বাণিজ্যিকভাবে লাভের সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া শরিফা ফল পেকে যাওয়ার পর দ্রুত খেয়ে ফেলতে হয়, কারণ এটি দ্রুত পচনশীল। আবার বাজারজাতকরণের সময়েও খুব সতর্ক থাকতে হয়, কারণ ফলটি সহজেই চাপা লেগে নষ্ট হতে পারে।
ফলে খুব কম সময় পাওয়া যায় সঠিকভাবে বাজারে পাঠানোর জন্য। তাই দাম বেশি বলেই এর চাষ করে লাভবান হওয়াই যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে সবকিছু সঠিকভাবে করতে পারলে এর সম্ভাবনা ভালো, বলেন তালহা।