গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ০৫ আগস্ট, ২০২২

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার খড়ের ঘর

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

শীত ও গরম উভয় মৌসুমে আরামদায়ক গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খড়ের ঘর। এক সময় গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের প্রধান ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই খড়ের ঘর। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সিরাজগঞ্জে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঘর। বর্তমানে খড়ের ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে রড, সিমেন্ট, ইট, খোয়া, বালি আর টিন।

খড়ের ছাউনির ঘর তৈরির জন্য প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বিশেষ কারিগর ছিল। এ জেলায় তাদের বলা হতো ‘খ্যারের ঘরের কারিগর’। তাদের মজুরি ছিল ১০০-২০০ টাকা। বর্তমানে কাজ না থাকায় অতীতের খ্যারের ঘরের কারিগররা জীবিকার সন্ধানে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে। আর তাই হারিয়ে যেতে বসেছে চিরচেনা এই খড়ের ঘর।

বৃদ্ধ কারিগর আলী আকবর জানায়, বিশেষ কায়দায় শুকনো ধানের খড়কে সাজিয়ে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ছাউনি দেওয়া হতো। ছাউনির উপরে বাঁশ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়ার কারণে ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এসব ঘর বছরের পর বছর টিকে থাকতো। গরমের দিনে ঠান্ডা আর শীতের দিনে গরম, তাই তারা এই ঘরকে আরামের ঘর বলে। উচ্চবিত্তরা শখের বসে কখনও কখনও পাকা ঘরের চিলা কোঠায় খড় ব্যবহার করতো। ২০-২৫ বছর আগেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত পরিবেশ বান্ধব বাঁশ, খড়ের ছাউনিতে তৈরি চৌচালা খড়ের ঘর। তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও কাজিপুরের চরাঞ্চলে কয়েকটি খড়ের ঘর চোখে পড়েও ঘরগুলোর অবস্থা খুবই জীর্ণ।

তাড়াশ উপজেলার কাদের, আব্বাস, বিমল কুমার, কবিতা রানী ও রায়গঞ্জের নিমগাছি গ্রামের সাত্তার ও নাটুয়া পাড়ার চরের জামাল উদ্দিন, কামারখন্দ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের অসিম মন্ডল ও বাশী আকবার জানান, কয়েক বছর আগেও আমাদের বাড়ির সব কয়টি ঘর খড়ের তৈরি ছিল। এখন আর আমাদের বাড়িতে খড়ের ঘর নেই। কিছুদিন আগে খড়ের ছাউনি ফেলে টিনের ছাউনি দেই। শীত ও গরমে উভয় দিনে ছনের ছাউনির ঘর বেশ আরামদায়ক। এছাড়াও বছর বছর খড় পরিবর্তন করতে হয়। এ কারণে অনেকে খড়ের ঘরকে ঝামেলা মনে করেন। ফলে খড়ের ছাউনির ঘরের সংখ্যা দিন দিন কমছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খড়ের ঘর,সিরাজগঞ্জ,খ্যারের ঘরের কারিগর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close