সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

বিলুপ্তপ্রায় বাঁশ শিল্প, ভালো নেই কারিগররা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

নাটোরের গুরুদাসপুরে অনেক পরিবার বাঁশ শিল্পের উপকরণ বেঁচে সংসার চালাতেন। এক সময় উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের সাহাপুর কালীনগর গ্রামের অধিকাংশ পরিবার বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলো। এখন সেই দৃশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না। প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি ও আধুনিক জীবনধারায় কমেছে বাঁশ শিল্পের ব্যবহার। এই উপজেলা থেকে বাঁশ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। কেউ কেউ বদলে ফেলেছেন পূর্বপুরুষের এই পেশা।

জানা গেছে, এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবারের সকল সদস্য ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গৃহস্থালীর উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন। এই শিল্পের সাথে জড়িত স্বল্প আয়ের কারিগররা সংসার চালাতে বর্তমানে হিমসিম খাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে অনেকে পূর্বপুরুষের এই পেশা বদলও করেছেন। এক সময় এ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও এখন এ শিল্পটি মৃত প্রায়। বাঁশের দাম বৃদ্ধি, তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ও দাম কমে যাওয়ার কারণে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সরেজমিনে মশিন্দা ইউনিয়নের সাহাপুর কালীনগরে দেখা গেছে, একটি ঘরে দলবদ্ধভাবে ওই গ্রামের কল্যানী রানী, প্রার্থনা রানী, পূর্নিমা রানী, প্রদীপ চন্দ্র তরনী দাস, তাপস চন্দ্র, মিনতি রানীসহ অন্তত ১০ জন নারী ও পুরুষ কাজ করছেন। তারা কুলা, হাত পাখা, ঝাঁকা, চালুন, টোপাসহ গৃহস্থালী পণ্য তৈরি করছেন।

বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রদীপ চন্দ্র তরনী দাস বলেন, এটা আমাদের পৈত্রিক পেশা। কয়েক বছর আগেও গ্রামের ৫০-৬০টি পরিবার এ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলো। এখন ১৫-১৬টি পরিবার এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। ২০০ টাকায় কেনা বাঁশের সঙ্গে সুতা, রঙ, লোহার তারসহ অন্যান্য উপকরণ খরচ ৫০ টাকা যোগ করে একজন শ্রমিক ২ দিনের পরিশ্রমে ৭০০-৮০০ টাকার পণ্য তৈরি করতে পারেন। খরচ বাদে প্রতিদিন পারিশ্রমিক থাকে ২০০-২৫০ টাকা। এ আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন।

পুর্নিমা রানী বলেন, তার তিন ছেলে এক মেয়ে স্কুল কলেজে লেখাপড়া করে। স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য তিনি এ শিল্প কাজ করছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কষ্টে এ পেশা টিকিয়ে রেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগীতা ছাড়া এ পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী বলেন, বাঁশ দিয়ে তৈরি উপকরণের নায্য দাম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি আর্থিক সহযোগিতা ও বিত্তবানদের পৃষ্ঠপোষকতার আহবান জানান তিনি।

ইউএনও তমাল হোসেন জানান, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভালো নেই কারিগর,বিলুপ্তপ্রায় বাঁশ শিল্প
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close