আহমেদ রেজওয়ান, ফেনী
ট্রমা সেন্টার নিজেই ‘কোমায়’, সেবা অন্য হাসপাতালে
মহাসড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে আধুনিক ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করে সরকার। কিন্তু অপ্রতুল চিকিৎসা সেবার ফলে হতাহতদের অনেকেই সময় মত চিকিৎসা নিতে পারছে না। ফলে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। আবার বেঁচে থাকলে বেছে নিতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব জীবন। ফলে যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে তা সভেস্তে যেতে বসেছে।
ফেনী ট্রমা সেন্টারটি চালু করা হয় ২০০৬ সালের ৩ অক্টোবর। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কেন্দ্রস্থল মহিপালের প্রায় এক একর জমির ওপর ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারে রয়েছে দুটি ভিআইপি কেবিন এবং ১৬ টি সাধারণ শয্যা। কিন্তু চালুর ১৬ বছরেও দিতে পারছে না পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবা।
লোকবলের অভাব, আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দের অভাবে ট্রমা সেন্টারটি যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না। তবে চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগ ট্রমা সেন্টারের জন্য নতুন জনবল নিয়োগ দেয়। বর্তমানে ট্রমা সেন্টারটিতে ১৯টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৮টি। একজন করে অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট, এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট, আবাসিক কর্মকর্তা, দুজন মেডিকেল অফিসার ও একজন ফার্মাসিস্ট আছেন। এছাড়া ১০ জন নার্সের বিপরীতে রয়েছে পাঁচজন নার্স। ট্রমা সেন্টারের আইসিইউ, সিসিইউ, এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, অপারেশন থিয়েটার ও জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নষ্ট। নেই অ্যাম্বুলেন্স ও পানি বরাদ্দ।সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফেনী-নোয়াখালী সড়কের অফিসারস কোয়ার্টার এর বিপরীতে ফেনী ট্রমা সেন্টার। হাসপাতালে গেটের সামনে রয়েছে সারি সারি অটোরিকশা ও ফলের ট্রাক। পাশেই রয়েছে ময়লার ভাগাড়।। নেই কোনো গ্যাটম্যানও। দিনরাত ট্রমা সেন্টারটি চালু রাখার কথা থাকলেও বিকেল চারটার পর বন্ধ হয়ে যায়। হার ভাঙা ও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত আহতদের চিকিৎসা সেবায় ট্রমা সেন্টার চালু করলেও কোনো রোগী এখানে আসে না।
পায়ে সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম নামে এক রোগী জানান, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় তাকে ট্রমা সেন্টার থেকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জামাল উদ্দিন নামে আরেক রোগী জানান, এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে মানুষকে আর ফেনীর বাইরে যেতে হতো না।
বহির্বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, ট্রমা সেন্টারটিতে সাধারণত ডায়রিয়া জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত রোগীরাই বেশি আসে। তাদের এখানে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়। আর যাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না তাদের ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফেনীর ট্রমা সেন্টারের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম সাইফুর আলম জানান, বর্তমানে ট্রমা সেন্টারটিতে আউটডোর এবং কোভিড ভ্যাকসিন সেন্টার চালু আছে। প্রয়োজনীয় লোকবল পেলে সেন্টারটিতে আরো বেশি মানুষের সেবা দেওয়া যাবে।
ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস সালেহীন বলেন, বর্তমানে সীমিত জনবল ও সীমিত লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে ট্রমা সেন্টারটি চালু রাখছি। আরো জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে সেবার মান আরো উন্নত করা যাবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ট্রমা সেন্টার ডেভেলপমেন্ট প্রসেসে আছে। লোকবল, পদ সৃষ্টি, স্ট্যান্ডার্ড কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছি। আধুনিক ট্রমা সেন্টার করতে হলে দশটি বেড দিয়ে সম্ভব নয়। আগে যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো ২০২৩ সালের মধ্যে ফাংশনিং করে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।