সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ
পশুর বর্জ্য থেকে বায়ুগ্যাস
মুন্সীগঞ্জে লৌহজংয়ের দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামে পশুর (গরু) নিঃসৃত বর্জ্য থেকে বায়ুগ্যাস, জৈব সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে কৃষক রুবেল শেখ। ফার্মে বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে পশুর বর্জ্য থেকেই তার এই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেবা কার্যক্রম শুরু করেন।
জানা গেছে, তিনি ২০১৫ সালে উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া ইউনিয়নের ছাতি মসজিদ এলাকায় এগ্রো ডেইরি ফার্মের যাত্রা শুরু করেন। বিভিন্ন এনজিওগুলো ‘ইডকল বায়োগ্যাস’ বা বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণের সুবিধা দেয় অনেক খামারীদের। রুবেলও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। ফার্মে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করেন। ওইখানে বিভিন্ন জাতের ১০০টি গরু রয়েছে। ওই সব পশুর বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ৭ টন গোবরের বায়ুগ্যাস নিঃসৃত হয়। এ জন্য গরুর খাবারের জন্য নেপিয়ান ঘাস, ভুট্টা ঘাস, জরা, জগা, জার্মান, পাঁচওয়ান ঘাসও উৎপাদন করা হয়।
তার ফার্ম থেকে প্রতিদিন বায়ুগ্যাস নিঃসৃত হওয়ায় ওইখান থেকে রান্না ও আশপাশে ১০-১২টি পরিবারের রান্নার গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে বাকি বায়ুগ্যাস থেকে জেনারেটিং করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। লোডশেডিংয়ের সময়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে ফার্মের মটর, লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ ইত্যাদি চালানো হয়। এরপরেও অনেক বিদ্যুৎ মজুদ থাকে। পরবর্তীতে বেঁচে যাওয়া বর্জ্যগুলো থেকে জৈব সার তৈরি করা হয়।
রুবেল শেখ জানান, বর্তমানে লোডশেডিংয়ের যে অবস্থা, এ সময় প্রতিটা খামারি যেন এই বায়ুগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে। এই প্ল্যান্টের কারণে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে না, উল্টো গন্ধ ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। কারণ বায়ুগ্যাস প্লান্টে ব্যবহার করা না হলে গরুর গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাগুলো এদিক ওদিক পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতো। প্ল্যান্টের আরেকটা সুবিধা হলো গ্যাস তৈরির পর যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা উন্নতমানের জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া যারা পুকুরে মাছের খাবার হিসেবেও ওই অবশিষ্ঠাংশ ব্যবহার করতে পারেন।
স্থানীয় নাজমুল হোসেন জানান, বর্তমানে লোডশেডিংয়ে আমরা বায়োগ্যাস ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছি। মাসে একটি পরিবার যেখানে ১-২টি এলপি গ্যাস ব্যবহার করে। যার মূল্য ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। ওইখানে মাত্র ১ হাজার টাকায় ১৫-১৬ ঘন্টা বায়োগ্যাসের নিরবিচ্ছন্ন সুবিধা পাচ্ছি।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমোদ রঞ্জন মিত্র জানান, ‘ইডকল বায়োগ্যাস’ বিদেশি অর্থায়নে এনজিওগুলো পশু খামারিদের খামারগুলোতে নির্মাণে সুবিধা দিয়ে থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বায়োগ্যাস সংযোগ নেওয়ায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে।