ইয়াকুব আলী, চৌগাছা (যশোর)

  ০২ আগস্ট, ২০২২

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনে নিম্নমানের ইট ও রড

অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

যশোরের চৌগাছায় ৫০ শয্যা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি ১’শ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। তবে নিম্নমানের ইট, রড ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমন অভিযোগ পাওয়ার পর রবিবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিরা এন্টারপ্রাইজের কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয় উপজেলা পরিষদে। সেখানে ঠিকাদারের ভগ্নিপতি উপস্থিত হয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। উত্থাপিত অনিয়মের বিষয়ে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন। পরে অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কাজের অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। হিরা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে জানানো হয়, কোন অনিয়ম করা হয়নি। সিডিউলে উল্লেখিত দামের চেয়ে বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশী। ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দুই কোটি টাকা লোবসান হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরুফা সুলতানা জানান, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে এলাকার অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শেখ এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার শেখ অলিদুর রহমান হিরাকে খবর দিয়ে উপজেলা পরিষদে আসতে বলি। কিন্তু ঠিকাদারের বদলে উপস্থিত হন ঠিকাদারের ভগ্নিপতি ইমরান হোসেন পাটোয়ারী। এ সময় তিনি জানান, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কাজের দায়িত্বে তিনি রয়েছেন। নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নিম্নমানের ইট, রড ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের কথা তাকে জানালে তিনি সন্তোষজনক কথা বলতে পারেননি। সে কারণে উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা খোঁজ খবর নিয়ে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স একশ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার প্রায় ২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বরাদ্দের এই টাকা ছাড় করবে। ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দুটি ভবনের একটি ৬ তলা বিশিষ্ট ৫০ শয্যা ভবন ও অপরটি প্রশাসনিক ভবন। ইতোমধ্যে ৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মিয়া জানান।

এদিকে সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কর্মচারীরা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ করছেন। কতজন এখানে কাজের সাথে যুক্ত জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জানান ১’শ ১৫ জন।

৬ তলা ভবনের প্রবেশ পথে দুই পাশের দেয়ালে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ভবনের প্রবেশপথ ধরে ভিতরে পশ্চিম ও পূর্ব পাশেও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় জানালার পাশে, সিড়ির কার্ণিশ ও ভেতরের বিভিন্ন দেয়ালে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যান্য তলায়ও একই অবস্থা।

কর্মচারীরা বললেন, দেড় নম্বর ইট। দেড় নম্বর ইট হয় কিনা- জানতে চাইলে ওই কর্মচারী নীরব থাকেন। প্রতিটি সিড়ির নিচেই পলেস্তারায় সঠিকভাবে বালু সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি- তা সহজে অনুমান করা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা বলেন, আমাদের যে ভাবে করতে বলা হয়েছে সেভাবে আমরা করছি। কি পরিমান বালু বা কি পরিমান সিমেন্ট দেয়া হচ্ছে তা তারা তারা জানেন না বলে জানান। তারা বলেন, এটা আমরা বলতে পারব না। এছাড়া ৫ তলার ছাদের কাজে কত ব্যাসের রড ব্যবহার করা হচ্ছে সেটাও কেউ বলেননি।

মূল ভবনের পেছনে প্রশাসনিক ভবনেও নিম্নমানের ইট লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া নি¤œমানের ইট যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ভবনে নিম্নমানের চিকন বালি ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের বর্ধিত ভবন নির্মাণে নি¤œমানের ইট, রড ও বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় সমালোচনা চলছে। ভবন নির্মাণ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন্নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নি¤œমানের ইট ও সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। বারবার ঠিকাদারকে বলা সত্বেও কোন কথা শোনেনি। কাজের এই অনিয়মের বিষয়ে আমি সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা হিরা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারের ভগ্নিপতি ইমরান হোসেন পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেশী। আমরা চেষ্টা করছি কাজটি ভালোভাবে শেষ করতে। তারপরও ইটের বিষয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে। ইউএনও ডেকেছিলেন। আমি বলেছি, নিম্নমানের ইট থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনে,নিম্নমানের ইট ও রড,যশোর,চৌগাছা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close