রাজশাহী ব্যুরো

  ২০ জুলাই, ২০২২

রাজশাহীতে সিডিউলের বাইরেও দীর্ঘ লোডশেডিং, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ফাইল ছবি

সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও এলাকা ভেদে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় দৈনিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়েছে। সে অনুসারে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লি. (নেসকো) এলাকা ভিত্তিক রাজশাহী মহানগরীতে কখন কোথায় লোডশেডিং হবে সে বিষয়ে গত সোমবার রাতে তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির সাথে বুধবার (২০ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত কোন মিল পাওয়া যায়নি। পূর্বনির্ধারিতের বাইরেও চলছে দীর্ঘ সময় লোডশেডিং। আর এর জন্য নেসকো কর্তৃপক্ষ দায়ী করছেন স্থানীয় ট্রান্সমিশন বা গ্রিড অফিসকে।

এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসকসহ শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, অভিভাবকসহ সকল পর্যায়ের নাগরিক। নেসকোর প্রকাশিত ওই তথ্যে প্রতিটি এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা উল্লেখ করলেও সারা দিনে প্রতিটি এলাকায় ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। আর এজন্য নাগরিকেরা বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন।

নেসকো’র দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগে তাদের গ্রহকের সংখ্যা ১৭ লাখ। এর বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৪৭০ মেগাওয়াট (গড় হিসেব)। তবে এই চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি রয়েছে গড়ে ৬০ মেগাওয়াট। আর ৪৭০ মেগাওয়াটের মধ্যে রাজশাহী মহানগরীতেই বিদ্যুতের চাহিদা থাকে গড়ে ১১০ মেগাওয়াট।

রাজশাহী মহানগীরসহ বিভিন্ন উপজেলার নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও সাংবাদিকদের ফোন করে অভিযোগ করেন, সরকার লোডশেডিংয়ের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিলেও যখন খুশি যতক্ষণ ইচ্ছে বিদ্যুৎ টেনে রাখছে। এতে করে লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে অসুবিধা হচ্ছে।

মহানগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার এক দোকানি জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এমনকি গভীর রাতে এবং ভোর রাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এমন অবস্থায় সরকারের উন্নয়ন কী বুঝবো? নগরবাসী জানান, বিদ্যুৎ ঠিকমত না থাকায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। সামনে যাদের এসএসসি, এইচএসসি ও এ্যাডমিশন পরীক্ষার্থী আছে তাদের ঠিকমত লেখাপড়া হচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। এছাড়াও বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুরা গরমে নাজেহাল হয়ে পড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার রাত ৮ টার মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা তা পালন করলেও দিনের বেলা ঠিকমত বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা ঠিকমত দোকানে আসছে না। রাজশাহী অঞ্চলে এমনিতেই প্রচুর গরম তার পরও বিদ্যুৎ এর বিপর্যয় সবমিলিয়ে আমরা কঠিন অবস্থা পার করছি।

বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তারা সেখানে সরকার ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোকে নানান মন্তব্য লিখে তুলোধুনা করছেন।

জানা গেছে, নেসকো সার্কেল-১ এর অধিনে রাজশাহী মহানগরী ও তানোর উপজেলা মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯০ থেকে মধ্যে ১২০ মেগাওয়াটের মধ্যে। মঙ্গলবার দিনের বেলা এই চাহিদা ছিল ৯৫ মেগাওয়াট। যার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ২৫ মেগাওয়াট। এদিন এক পর্যায়ে বিদ্যুতের ঘাটতি গিয়ে ঠেকে ৪৬ মেগাওয়াটে। যা মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নেসকোর পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিরিন ইয়াসমিন বলেন, জনারেশন, ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন এই তিন ধাপ পেরিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের দোড়গোড়ায় এসে পৌঁছায়। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কাজ করে থাকে ট্রান্সমিশন বিভাগ। আর ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ করে নেসকো। সময় নির্ধারণ করে দিয়ে লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনাটি মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে। আমাদেরকে বলা হয়েছে, শিডিউল করে গ্রিডে পাঠাতে। ফলে আমরা বিদ্যুতের চাহিদা দিয়েছি। এছাড়াও লোডশেডিংয়ের শিডিউল করে তা গ্রিডে পাঠিয়েছি এবং গ্রাহকদের সুবিধার্থে নেসকোর ওয়েব সাইটেও দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি লোডশেডিং যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং মানুষ যেন লোডশেডিংয়ের শিডিউলটা জানতে পারে। যেন সে অনুপাতে সকলেই তাদের কাজগুলো সেরে ফেলতে পারে।

এদিকে লোডশেডিয়ের সিডিউল শতভাগ মানা হচ্ছে না তা স্বীকার করে নেসকো’র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, যারা লোডশেডিং দিচ্ছেন তারা এখনো শতভাগ বুঝে উঠতে পারেনি। আমি সংশ্লিষ্ট অফিসে লোক পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কিভাবে লোডশেডিং দিতে হবে। গ্রিড অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন তাদের নির্দেশ দিবে তখন তারা লোডশেডিংয়ের নির্দেশনাটি শতভাগ মানবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এলাকাবাসীর ক্ষোভ,লোডশেডিং,রাজশাহী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close