উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ০৩ জুলাই, ২০২২

বিএসএফ’র ধাওয়ায় নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

নিহত শিশু পারভীন (৮), শাকিবুর (৪)। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে গভীর রাতে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিএসএফ-এর ধাওয়ায় নদীতে ডুবে বাংলাদেশি দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বাবা-মা নদী সাঁতরে পাড়ে উঠে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করলেও হাত ফসকে শিশুদুটি নদীতে ডুবে যাওয়ায় আর সন্ধান মেলেনি। তিনদিন পর ৩ (জুলাই) রবিবার সকাল ৮টার দিকে ঐ সীমান্ত এলাকায় লীলকোমল (ভারতের অভ্যন্তরে) নদীতে ডুবে যাওয়া শিশু দুটির লাশ ভেসে উঠে।

শুক্রবার (১ জুলাই) গভীর রাতে বাবা-মা দুই সন্তানসহ দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতীয় বিএসএফ ধাওয়া দিলে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সূখাতি গ্রামের মো. রহিচ উদ্দিন (৪০) ও তার স্ত্রী সামিনা বেগম (৩৪) জীবিকার তাগিদে ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের সুলতানপুর নামক স্থানে, চুক্তিতে ইট-ভাটার কাজ করার জন্য যান। এক সময় চুক্তিমত কাজ শেষ করে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউটি সীমান্তে উপস্থিত হন রহিচ উদ্দিন। এসময় ভারতীয় পাচারকারী দালাল চক্রের সাথে চুক্তিবদ্ধে আবদ্ধ হন।

এ ব্যাপারে রহিচ উদ্দিন জানান, শুক্রবার (১ জুলাই) ভারতীয় পাচারকারী দালাল চক্রের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে গভীর রাতে দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে নীলকোমল নদীর ধারে নোম্যান্সল্যান্ডে এনে দাঁড় করিয়ে রেখে বলে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে চলে যাও। একপর্যায়ে সাড়াশব্দ টেরপেলে ভারতের সেউটি ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ টর্চলাইট জ্বালিয়ে ধাওয়া করে। অবস্থায় বেগতিক দেখে রহিচউদ্দিন তল্পিতল্পা নিয়ে ও স্ত্রী সামিনা বেগম দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে নদী সাঁতরে থাকলে এক পর্যায়ে নদীর তীব্র স্রোতের বেগে দুই সন্তানের হাতের মুঠো খুলে ডুবে যায়। দুই শিশুর নাম পারভীন (৮) আর শাকিবুর (৪) কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বুকফাটা চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে একথা বলতে থাকে বাবা-মা।

ঘটনার তিনদিন পরে ৩ (জুলাই) রবিবার সকাল ৮টার দিকে ঐ সীমান্ত এলাকার লোকজন লীলকোমল নদীতে ডুবে যাওয়া শিশু দুটির লাশ ভারতের অভ্যন্তরে পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়। লাশ ভারতের অভ্যন্তরে থাকায় পরে দুপুরের দিকে ভারতের দিনহাটা থানা পুলিশ এসে নদী থেকে লাশ উত্তোলন করে নিয়ে যায়।

সূত্রমতে, ভারতীয় পুলিশ আগামী সাতদিনের মধ্যে যদি লাশের ওয়ারিশ যথাযোগ্য প্রমাণ দিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করে তাহলে আমরা তাদের নিকট লাশ ফেরৎ দিব।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট ১৫ বিজিপির কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার কবির হোসেন জনান, পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের কোন প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় শিশু দুটির মরদেহ বিএসএফ নীলকোমল নদী থেকে উদ্ধার করেছে। এ নিয়ে দু'দেশের কোম্পানি পর্যায়ে এক সৌজন্যমূলক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএসএফ,ধাওয়া,নদীতে ডুবে,শিশু,মৃত্যু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close