সুমন ইসলাম, (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২৬ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে যানজট, পার হয়ে উচ্ছ্বসিত চালক-যাত্রীরা

পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন কিলোমিটার যানজট। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। রবিবার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে সেতুতে টোল দিয়ে যানবাহন পারাপারা শুরু হয়। সেতুর শ্রীনগরের সমসপুর এলাকা থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরে ভোর ৬টায় টোল প্লাজা দিয়ে সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। এদিকে মাত্র ৬-৭ মিনিটেই পদ্মা সেতু পার হতে পেরে উচ্ছ্বসিত চালক ও যাত্রীরা।

জানা গেছে, রবিবার সকাল থেকেই পদ্মা সেতু এলাকা ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উৎসুক জনতা সেতুতে উঠার জন্য ভিড় করে। আবার অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতুতে ঘোরার জন্য এসেছেন। একদিকে বাড়তি গাড়ির চাপ অন্যদিকে পদ্মা সেতুতে গাড়ি উঠাতে হলে টোল দিতে হবে, এটা না জেনেই অনেকে গাড়ি নিয়ে এসেছেন। এতে টোল প্লাজায় একদিকে যেমন বাকবিতন্ড হয়েছে, তেমনি টোল আদায়ে মন্থর গতির কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে গাড়ি চলাচলের আগে থেকেই টোল প্লাজার সামনে ছিলো গাড়ির বিশাল চাপ। মধ্যরাত থেকেই এসব গাড়ি অপেক্ষমান। পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়াও আছে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল। ট্রাক ছাড়া যাদের বেশির ভাগই এসেছেন ঘুরতে। এ কারণে পদ্মা সেতুর শ্রীনগরের সমসপুর এলাকা থেকে পদ্মা সেতুর টোল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা গেছে পুলিশকে। টোল প্লাজা থেকে ছুঁটার পর মানুষের মধ্যে দেখা গেছে অন্যরকম আনন্দ উচ্ছ্বাস। রবিবার সকাল ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।

দীর্ঘ জ্যামে কিছুটা ভোগান্তি হলেও অনেকে আবার পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতুর মাওয়া থেকে জাজিরা প্রান্তে যাওয়া বিশ্বনাথ মন্ডল বলেন, জ্যাম লেগেছে শুরুতেই। তবে এই কষ্ট ফেরিতে যাওয়ার থেকে অনেকটা কম। জ্যামে যে ভোগান্তি ছিলো, এটা তেমন কিছুই না। পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে পারছি, এটা ভেবেই ভালো লাগছে।

ঢাকা থেকে বাগেরহাট যাওয়ার জন্য বাসে উঠেন সুমন। মাওয়া প্রান্তে প্রায় একঘন্টা জ্যামের মধ্যে বসেছিলেন তিনি। কিন্ত টোল প্লাজায় এসেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, বাগেরহাট যাচ্ছি। পদ্মার ওপর দিয়ে যাবো, এটা ভেবেই ভালো লাগছে।

বাইকচালক মোহাম্মদ ইমরান বলেন, মাদারীপুরে কাজে যাচ্ছি। দুই কিলোমিটার জ্যামের মধ্যে ছিলাম। এতক্ষণ ভোগান্তি মনে হলেও এখন ভালো লাগছে।

এদিকে, জ্যাম নিয়ে কিছুটা অভিযোগ ছিলো যাত্রীদের। তারা বলেছেন, টোলে কিছুটা সময় বেশি লাগছে হয়তো, তাই গাড়ি এগুচ্ছে না। পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে এদিন সকাল থেকে উৎসুক জনতা সেতুর উত্তর প্রান্তে ভিড় করেছে। এ কারণে পদ্মা সেতুর শ্রীনগরের সমসপুর এলাকা থেকে পদ্মা সেতুর টোল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনর্চাজ জিয়া জানান, পদ্মা সেতু সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য রাত থেকেই কিছু গাড়ি সেতু পারের জন্য টোল প্লাজায় অপেক্ষা করছিলো। এজন্য কিছুটা যানজট সকালে দেখা দিয়েছিলো। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আছে। তবে কাউন্টারে দায়িত্বরতরা বলছেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপে জ্যাম লেগেছে। টোলে যতটুকু সম্ভব কম সময়ই দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে টোল প্লাজায় টিকিট কাউন্টারের দাঁয়িত্বরত সাগর হোসেন বলেন, আজকেই প্রথম যান চলাচল শুরু হয়েছে। তাই গাড়ির একটু চাপ রয়েছে। আর এখানে সবকিছুই যেহেতেু নতূন, একটু সময় তো লাগতেই পারে। মাওয়া প্রান্তে ৬টি কাউন্টার চলছে। অর্থাৎ ৬টি লেন দিয়ে গাড়ি চলছে।একটি ভিআইপি কাউন্টার আছে। ৬টি কাউন্টারই ম্যানুয়ালি চলছে। যে গুলোকে অটো করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। জাজিরা প্রান্তেও ৭টি কাউন্টার রয়েছে।

অপরদিকে গত ২৫ জুন শনিবার বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এ সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের প্রায় ১৮ ঘন্টা পর বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে রবিবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়। যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়ার সাথে সাথে দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেইট চালু হয়ে যায়। সবকয়টি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। নির্ধারিত টোল দিয়ে থ্রি-হুইলার ছাড়া যে কোনো গাড়ি পার হতে পারছে।

অন্যদিকে সেতু নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকায় যান চলাচল শুরুর দিন ভোররাত থেকেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রসওয়ে ভিড় জমায় শতশত যানবাহন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও যথাযথ প্রস্তুতি রেখেছেন বলে জানানো হয়েছে। টোল প্লাজার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, টোল প্লাজার এখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার কোনো নিয়ম নেই। তাই আমরা নির্দিষ্ট বাস কাউন্টারে যাওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করেছি এবং সরিয়ে দিচ্ছি।

সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে যানবাহন পারাপারের জন্য পদ্মা সেতু টোল প্লাজা খুলে দেওয়া হয়। টোল প্লাজা খোলার পর প্রথম দিকে মোটরসাইকেলের চাপ ছিলো বেশি। কিন্ত পরে বাস-মিনিবাস-প্রাইভেটকার ও ট্রাকের দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। তবে পদ্মা সেতু পার হওয়া ও দেখার জন্য উৎসুক জনতার সংখ্যাই বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও যথাযথ প্রস্ততি রেখেছে, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানায়,পদ্মা সেতুতে ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। এ সেতুর ওপর যে কোনো ধরণের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটতে নিষেধ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু পারাপারে সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী,পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কারও জিপে ৭৫০টাকা, পিকআপে ১২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে। বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাস ২০০০ টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) প্রতি ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। এছাড়া ছোট ট্রাককে (৫ টন পর্যন্ত) ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮টনের বেশি) ২৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সল পর্যন্ত) ৫৫০০ টাকা, ট্রেইলার ( ফোর-এক্সেল পর্যন্ত ) ৬০০০ টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর- এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।

পদ্মা পার হতে আগে লঞ্চ- ফেরিতে যেখানে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগতো,এখন সহজেই ৬-৭ মিনিটে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুর ওপর দিয়ে পার হচ্ছে যানবাহনগুলো। এতোদিন শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে লঞ্চ, স্পিডবোট আর ফেরিতে করে নদী পারাপার হলেও এখন সেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গ যাতায়াত করা যাবে খুব সহজেই।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পদ্মা সেতু,যানজট,উচ্ছ্বসিত,চালক,যাত্রী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close