বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ২১ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতু খুলে দেবে দক্ষিণাঞ্চলের জেলে ও কৃষকের ভাগ্য

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

পটুয়াখালীর বাউফলসহ উপকুলীয় জেলা ও উপজেলা থেকে নদীপথে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলায় নদী, পুকুর ও জলাশয়ের মিঠা পানির মাছ পাঠাতে গেলে প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হতো জেলেরা। একইভাবে কৃষকের উৎপাদিত ফসলও সরবরাহেও দীর্ঘ পথ ও সময় পাড়ি দিতে হতো। পদ্মা সেতু চালু হলে সড়ক পথে দ্রুত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এখন কৃষিপণ্য এবং মাছ পৌঁছে যাবে ঢাকাসহ দেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এখন পদ্মা সেতু চালু হলে জেলে ও কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পটুয়াখালীর জেলেরা জানান, যারা তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকার করে স্থানীয় আড়তদারদের মাধ্যমে নদীপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতেন। নদীপথে মাছ পাঠাতে গিয়ে নাব্যতা সংকট, লঞ্চের ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটি, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলযানের ধীরগতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তেব্যে পৌঁছাতো না। ফলে প্রায়ই লোকসানের মুখে পড়তেন আড়তদাররা। এর প্রভাব পড়ত তেঁতুলিয়ার নদীর ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র জেলেদের উপর। এছাড়া নদী, পুকুর, জলাশয়ের মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠাতে খরচ ও সময় বেশি লাগতো বলে লোকশান গুণতে হতো। পদ্মা সেতু হলে এই সমস্যা নিরসন হবে বলে জানান জেলেরা।

উপজেলার তেঁতুলিয়া নদী তীরবর্তী কালাইয়া বন্দরের মৎস্য আড়তদার সমিতির একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, জেলেরা রাতভর মাছ ধরে সকালে নিয়ে আসেন আড়তে। সেই মাছ ফ্রিজিং করে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এরপর সারারাত প্রায় ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পৌছাতে লাগে। আবার কোনো কোনো সময় নদীর নাব্যতা সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটি, ও লঞ্চের ধীর গতির জন্য ২০ থেকে ২২ ঘণ্টাও লেগে যায়। দীর্ঘ সময় মাছ বরফে থাকার কারণে এর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর। বাজারে দামেও তুলনামূলক কম পাওয়া যায়।

ভাই ভাই মৎস্য আড়তের মালিক অমল দাস বলেন, আমরা যখনই বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না, তার প্রভাব সরাসরি জেলেদের উপর পড়ে। পদ্মা সেতু খুলে গেলে রাতে ধরা মাছ ভোর বেলায়ই সড়কপথে ঢাকা পাঠানো যাবে মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায়। এতে মাছের গুণগত মান যেমন অক্ষুণ্ন থাকবে তেমনি দামও পাওয়া যাবে বাজারের অন্যান্য এলাকার মাছের চেয়ে বেশি। পদ্মা সেতু খুলে গেলে প্রতিযোগিতার বাজারের আমরাই হবো সেরা। জেলেরা বেশি লাভবান হবেন।

চরবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রবীণ জেলে বাদশা মাঝি বলেন, রাতভর কষ্ট করে মাছ ধরি, মাঝে মধ্যে বাজার ভালো পাই আবার কখনো তা কমেও যায়। মহাজন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালু হলেই নাকি আমাদের ভাগ্য খুলে যাবে। আমরা নাকি মাছ বিক্রিতে বেশি লাভ পাবো।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, উপজেলার জেলেদের দীর্ঘ বছরের একটি সমস্যা ছিল ঢাকায় নদীপথে মাছ পাঠানো। সেই সদস্যা দূর হবে পদ্মাসেতু চালু হলেই। আশা করা যাচ্ছে, উপজেলার জেলেদের ভাগ্য পরিবর্তনে পদ্মাসেতুর ভূমিকা থাকবে উল্লেখ করার মতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।

বাউফলের কৃষক বলরাম রায় বলেন,পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে সহজে সরবরাহ করা যাবে। এতে তারা ফসলের দাম যেমন ভালো পাবেন, তেমন আগের চেয়ে নানান ফসল উৎপাদনেও উৎসাহ বাড়বে।

বাউফল পৌরসভা থেকে ঢাকায় সরাসরি বিআরটিসি (শিতাতাপ নিয়ন্ত্রিত) বাস চালু হবে ২৬ জুন থেকে। এ ছাড়াও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্য যা নদীপথে আসা-যাওয়া করত। পদ্মা চালু হলে সেগুলো সড়কপথে আসা-যাওয়া করবে। এসব যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে তার জন্য প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাউফল,মিঠা পানির ইলিশ,পদ্মা সেতু,জেলে
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close