মো. রায়েজুল আলম (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

  ২০ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতুতে আশা জেগেছে শরীয়তপুরের শিল্পোদ্যোক্তাদের

আগামী ২৫ জুন শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মাসেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনে নতুন করে আশার আলো দেখছেন ২৩ বছরেও কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়া শরীয়তপুরের বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা।

উদ্বোধনের পর ২৬ জুন যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। এর মধ্য দিয়ে খুলে যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাসহ পুরো দেশের স্বপ্নের দুয়ার। আর এই স্বপ্নের দুয়ার খুলে দেয়ার খবরে আশার আলো দেখছেন ২৩ বছরেও কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন শরীয়তপুর (বিসিক) শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা।

নগরীর উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে নতুন উদ্যোমে প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করতে শুরু করেছে। ফলে নতুন করে অনেক শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এই নগরীতে। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে ঢাকার সাথে শরীয়তপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। ব্যবসা বাণিজ্যসহ সব কিছুতেই আসবে আমুল পরিবর্তন। ব্যবসায়ীদের উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই সরবরাহ করতে পারবে ঢাকার বাজারসহ সারাদেশে। এতে খরচ এবং সময় দু’টিই সাশ্রয় হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মরহুম আব্দুর রাজ্জাক উদ্যোগ নিয়ে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের প্রেমতলা নামক স্থানে প্রায় ১৪ একর জমির ওপর এই শিল্পনগরীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালের ১০ জুলাই শিল্পনগরীর উদ্বোধন করা হয়। এই শিল্পনগরীতে মোট প্লট রয়েছে ১০০টি। এর মধ্যে চারটি প্রশাসনিক ও বরাদ্দকৃত প্লট ৯৬টি। শিল্প ইউনিট রয়েছে ৫৯টি। উৎপাদনরত শিল্প ইউনিট সংখ্যা ৪২টি। উৎপাদনমুখী দুইটি ও বন্ধ ইউনিট রয়েছে চারটি। শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত ইউনিট রয়েছে ৯টি। শিল্পনগরীতে ২৩ বছরেও কাঙ্খিত কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ দীর্ঘ সময়ে বিসিক শিল্প নগরীর কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে পদ্মা নদী পারাপার ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বেশি দায়ী করেছেন উদ্যোক্তারা।

নগরীর উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুরের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই খারাপ ছিল। শরীয়তপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৭৮ কিলোমিটার হলেও নদী পার হতে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়। কখনও কখনও একদিনেরও বেশি সময় কেটে যেত পদ্মা নদী পার হতে। এখন পদ্মা সেতুর বদৌলতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। শরীয়তপুরের এই শিল্পনগরীর অনেক গুরুত্ব বেড়ে যাবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকার বাজারসহ বিভিন্ন বাজারগুলোতে এখানকার পণ্য সরবরাহ করতে পারবে নগরীর ব্যবসায়ীরা।

শরীয়তপুর বিসিক শিল্প নগরীর উদ্যোক্তা তালুকদার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড অটো ফ্লাওয়ার মিলসের পরিচালক মো. জিন্নুরাইন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা ঢাকার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে পূর্বের তুলনায় কম খরচ ও অল্প সময়ে আমাদের উৎপাদিত পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করতে পারব বলে আশা করছি। যে কারণে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি।

শরীয়তপুর বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর শরীয়তপুর বিসিক শিল্প নগরী হবে দক্ষিণ অঞ্চলের বৃহত্তর শিল্প নগরী। এখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ হবে। ইতোপূর্বে ভারতসহ কয়েকটি দেশ শরীয়তপুর শিল্প নগরীতে শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহ হয়েছেন। একমাত্র পদ্মা সেতুর কারণেই শরীয়তপুরের মতো স্থানে বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ হলে জেলার বেকার সমস্যাসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে।

শরীয়তপুরের বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা অর্ক সরকার বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার সংবাদের পর থেকে অনেক উদ্যোক্তা বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দের জন্য আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ইতোপূর্বে যারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী শরীয়তপুরের বাজারে বাজারজাত করার মতো মালামাল তৈরি করত। এখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে এই সব ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে নতুন উদ্যোগে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো শুরু করেছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পদ্মা সেতু,আশা জেগেছে,শরীয়তপুর,শিল্পোদ্যোক্তা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close