এস এম রাফি, চিলমারী থেকে

  ২০ জুন, ২০২২

চিলমারীতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, তলিয়ে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্প

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ।

উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের সব কয়েকটি নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে জেলার চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় বিপৎসীমার ৫২ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চল, দ্বীপচর ও নদের তীরবর্তী এলাকার মানুষজন পড়েছেন বিপাকে। তলিয়ে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।পানিবন্দিরা ছুটছেন বাধের ধারে আশ্রয় নেয়ার জন্য। এদিকে খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধসহ গো-খাদ্যের চরম সংকটে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পানিবন্দি লোকজন। তবে প্রয়োজনীয় খাবার মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে বানভাসী মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় পানি ১১ সে. মি. বৃদ্ধি পেয়ে দুপুর ১২ পর্যন্ত বিপৎসীমার ৫২ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও দু’একদিন এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানায় পাউবো। এদিকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় সব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে উপজেলার আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এই পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ২৭’শ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এর মধ্যে পাটের ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাশ। শুধু তাই নয় লোকসানে পড়েছেন মৎস্য চাষীরা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় সকলেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা পানিবন্দিদের খোঁজ খবর নিচ্ছি সবসময়। বর্ন্যাতদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সার্বক্ষণিক পানিবন্দিদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে, ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকা ও ৩০ মে. টন চাল বরাদ্দ পেয়েছে যা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমের বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, এই বন্যাকালীন সময়ে শিশু, বয়স্ক নারী ও পুরুষদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে রাখতে হবে। ছোট ছেলে মেয়েদের সবসময় চোখে চোখে রাখতে হবে। যাতে কোন প্রকার দুর্ঘটনায় কেউ না পরে।

এদিকে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক এলাকা। তলিয়ে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। প্রায় এক সপ্তাহ থেকে পানিবন্দি থাকলে আশ্রয়ণবাসিদের মাঝে মেলেনি কোন সহায়তা, বাড়ছে দুর্ভোগ, দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটের সাথে ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা থেকেও রয়েছে বঞ্চিত তারা। সরকারি ঘর পেলেও সরকারি অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকায় হাতাশ বাসীন্দারা।

জানা গেছে, টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের চিলমারী ডুবতে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার জোড়গাছ বাঁধ এলাকায় সদ্য নির্মাণ হওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। একই স্থানে গড়ে উঠা ১৫টি পরিবারের জন্য ১৫টি ঘর নির্মাণ করা হলেও নির্মাণে অনিয়মসহ আশ্রয়ণবাসিদের বের হওয়ার কোন রাস্তার ব্যবস্থা না করায় বিপাকে রয়েছেন আশ্রয় নেয়া বাসিন্দারা বলে জানান তারা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চিলমারী,পানিবন্দি,আশ্রয়ণ প্রকল্প
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close