জালাল উদ্দিন ভিকু, দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৯ জুন, ২০২২

যমুনার ভাঙনে তিন স্কুলসহ এক হাজার বাড়ি নদীগর্ভে

প্রতিদিন যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

যমুনা নদীতে বর্ষার পানি বৃদ্ধি ও থেমে থেমে প্রবল বর্ষণের ফলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া, বাচামারা, চরকাটারী এই তিন ইউনিয়নে ভয়াবহ ভাঙনে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় এক হাজার পরিবারের বসতভিটে বাড়িসহ ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্ষার পানি আসার সাথে পাল্লা দিয়ে যমুনা নদীতে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন।

চোখের সামনে নিমিষেই ভিটে বাড়ি ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জায়গা জমি সহায়-সম্বল হারিয়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে অনেকেই। নদীগর্ভে শেষ আশ্রয়টুকু চলে যাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় খোলা আকাশের নীচে দিন কাটছে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত্র অসহায় মানুষের। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এভাবেই যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।

ইতোমধ্যে দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি, পাচুরিয়া, ইসলামপুর, বাসাইল, জোতকাশি, রাহাতপুর, বাচামারা ইউনিয়নের বাগসাইট্টা, সুবুদ্দিয়া, নিজ ভারাঙ্গ উত্তর খন্ড, চরভারাঙ্গা দক্ষিণ খন্ড, চরকাটারী ইউনিয়নের চরকাটারী মন্ডল পাড়া, সেক পাড়া, চরগোবিন্দপুর মন্ডল পাড়া, সধিরের পাড়া, ৩৩নং চরকাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩১নং যমুনা চরকাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়সহ এই তিনটি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারের বসত ভিটা ও ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে আরও অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলী জমি। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এসব এলাকার নারী-পুরুষ।

চরভাঙ্গার সরকার পাড়া গ্রামের আব্দুল আওয়াল, নাজির আহম্মেদ ও চরভারাঙ্গা মজুম সেকের পাড়ার আকাদত আলী, দুলাল সেক বলেন, জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবছর নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও স্থায়ী সমাধানের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষা মৌসুমে জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ চরকাটারীর আলমগীর সেক, হযরত ফকির, আক্কেল মন্ডলসহ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নদীতে ৫/৬ বার বাড়ি ভাঙা দিয়ে সরিয়ে একবার এপাড়ে আসি আবার ওপাড়ে যাই। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এ নদীতে বেড়িবাঁধ হবে। কিন্তু এতো বয়স হয়ে গেলে আজ পর্যন্ত বাঁধ দেখতে পারলাম না। নদীর ভাঙ্গনে ভিটে বাড়ি আবাদি জমি সব শেষ। প্রতিবছর নদীর ভাঙন দেখা দেওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলে যায়। এগুলো আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। এ বিষয়ে বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকার বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে বাচামারা ইউনিয়নের যমুনা নদীর পূর্ব পাড়ের প্রায় ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগসাইট্টা, সুবুদ্দিয়া, চরভারাঙ্গা দক্ষিণ খন্ড, নিজ ভারাঙ্গা উত্তর খন্ড এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে প্রায় চার শতাধিক পরিবাবের বসত ভিটে বাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে মুন্সিকান্দি,পাচুরিয়া, ইসলামপুর, বাসাইল, জোতকাশি, রাহাতপুর ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে প্রায় তিন শতাধিক পরিবাবের বসত ভিটে বাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী মন্ডল বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে ৩৩নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩১নং যমুনা চরকাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়সহ তিন শতাধিক বসত ভিটে বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে কোন বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে পানি নেমে গেলে প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো যাবে। আর কয়েকদিনের মধ্যে নদীর পাড় ডুবে যাবে, তাই জিও ব্যাগ ফেলে কোন লাভ নেই। বাচামারা এলাকায় বর্ষার আগে শুকনো মৌসুমে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কি. মি. নদী ভাঙন রোধের কাজ করেছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরুল হাসান বলেন, ভাঙন রোধে বাচামারা এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেছে। সরকার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা পাইনি। তালিকা পেলে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় বলেন, শুকনো মৌসুমে বাচামারা ইউনিয়নের যমুনা নদীর পূর্ব পাড়ের প্রায় ২৪ কোটির টাকার বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হয়েছে। ফলে এবছর বাচামারা বিবিসি কলেজ, বাচামারা উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ, বাচামারা বাজার, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪/৫ গ্রাম ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙ্গন প্রতিরোধে টাঙ্গাইলের সীমানা থেকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর পর্যন্ত নদীতে ডেজিং ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে একনেকে প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। বর্ষার পর নদীতে ডেজিং ও বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দৌলতপুর,যমুনার ভাঙন,স্কুল,বাড়ি,নদীগর্ভে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close