আরিফ খান, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ২৫ মে, ২০২২

গো-খাদ্যের দামে দিশেহারা খামারিরা, বিক্রি করে দিচ্ছেন গরু

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ।

দেশের অন্যতম প্রধান গরু পালনের এলাকা পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলায় গো-খাদ্যের দাম পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। গো-খাদ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দুই উপজেলার সব গরু পালনকারীই এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গো-খাদ্যের দাম নাগালের বাইরে গেলেও দুধের দাম বাড়েনি। এর ওপর অগ্নিমূল্যের গোখাদ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল দেওয়ার পাশাপাশি ওজনেও কম দিচ্ছেন। এ অবস্থায় দিশেহারা খামারিরা বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

খামারি ও গোখাদ্য ব্যবসায়ীরা জানান, দিন দশেকের ব্যবধানে ৪০ টাকা কেজি দরের গম ও অ্যাংকর ডালের ভুসি ৫৭ টাকা, ৪৫ টাকা কজি দরের খেসারির ভুসি ৫৫ টাকা, ৩৪ টাকা কেজি দরের মশুরির ভুসি ৪২ টাকা, ১১ টাকা কেজি দরের ধানের গুড়া ১৫ টাকা হয়ে গেছে। গরু পালনকারীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন মূল গোখাদ্য খড় কিনতে গিয়ে। কয়েকদিন আগেও ৩৫০ টাকা মণ দরে খড় বিক্রি হতো। এখন সেই খড়ের দাম হয়েছে ৫০০ টাকা। তা-ও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।

খামারিরা অভিযোগ করে জানান, প্রতি বস্তায় ৩৭ কেজি করে ভুসি থাকার কথা থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা দুই থেকে তিন কেজি করে ভুসি কম দিচ্ছে। এসব ব্যবসায়ী বস্তা থেকে দুই থেকে তিন কেজি ভুসি বের করে তা নতুন করে সেলাই করে দেন। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী ওজন সঠিক দেখানোর জন্য বের করে নেওয়া ভুসির পরিবর্তে তুষ, পচা আটা, ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মিশিয়ে দিয়ে থাকেন। খামারিরা বস্তাগুলোতে নিখুঁত সেলাই ও লেবেল দেখে তা ভালো ভুসি মনে করে কিনে নিয়ে যান।

এ ছাড়া খড় কিনতে গিয়েও খামারিরা প্রতারিত হচ্ছেন। খড় বিক্রেতারা প্রতিমণে ৫ থেকে ৮ কেজি করে ওজন কম দিচ্ছে বলে খামারিরা অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে বেড়া ও সাঁথিয়ার কয়েকটি খড় বিক্রির স্থান ঘুরে দেখা গেছে সেখানে খড় ওজন করার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনুমানের ভিত্তিতে বিক্রেতারা খড়ের বোঝা তৈরি করে তা খামারিদের কাছে মণ হিসেবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

বেড়া পৌর এলাকার করমজা বাজারের খড় বিক্রেতা আব্দুল আউয়াল জানান, অনুমানের ভিত্তিতে খড়ের বোঝা বানিয়ে বিক্রি হলেও ওজন ঠিকই দেওয়া হয়। আর কয়েকদিনের বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় খড় নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে মোকামে গিয়েও খড় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দাম বেড়েই চলেছে।

বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার খামারি আবুল মোমিন বলেন, ঈদের আগে এক কেজি গমের ভুসির দাম ছিল ৩৫ টাকা। ঈদের তিন-চার দিন পর সেই ভুসির দাম হয়ে গেল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আইজক্যা গমের ভুসির দাম ৫৭ টাকা কেজিতে যায়া ঠেকিছে। একই হারে অন্য গোখাদ্যের দামও বাইড়্যা গেছে। তাই বাধ্য হয়া খামারের ৮টা গরু গেল মঙ্গলবার বেইচ্যা দিল্যাম। সাঁথিয়ার করমজা বাঐটেলা গ্রামের খামারি হাসান আলী জানান, কোরবানির ঈদের হাটে বেচার জন্য আমি ৫টি গরুর জোগাল দিছিলাম ভালো দাম পাওয়ার জন্নি। কিন্তু গরুর খাদ্যর দাম বেড়ে গেছে অনেক তাই আমার পক্ষে ঈদের হাট পর্যন্ত গরু রাখা সম্ভব না। সামনের হাটে সবকয়টা গরুই বেচে দিব। হাটেও গরুর দাম আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে বলে তিনি জানান।

জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার খামারি মাহফুজা মীনা বলেন, আমার খামারে মোট ৬৫টি গরু। প্রতিদিন ৩০০ লিটারের মতো দুধ হয়। এই দুধের দাম তিন-চার বছর আগে (প্রতি লিটার ৪০ টাকা) যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। অথচ গোখাদ্যের দাম এই কয়েক বছরে দুই-তিনগুণ বেড়েছে। রোজার আগেও আমার খামার থেকে লাভ হতো। গোখাদ্যের দাম বাড়ায় এখন প্রতি মাসে এক লাখ টাকা লোকসান যাচ্ছে। তাই খামারর গরু বেচে দিতে শুরু করেছি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গো-খাদ্য,খামারি,গরু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close